তেল ও পণ্য আমদানির নামে আড়াই কোটি টাকা গায়েব

এসএওসিএলের কার্যালয়ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে (এসএওসিএল) তেল ও পণ্য আমদানির নামে আড়াই কোটি টাকা গায়েব করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভুয়া কাগজপত্র ও প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে এসব টাকা সরিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল সোমবার এসএওসিএলের দুই কর্মকর্তা ও বাইরের তিন ব্যবসায়ীকে আসামি করে মামলা করেছেন দুদকের মানি লন্ডারিং শাখার উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এজাহারে বলা হয়, কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তা ও বাইরের কিছু ব্যবসায়ী পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাঁরা ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অ্যাডিটিভস (তেলের গুণগত মান বৃদ্ধিকারী রাসায়নিক), লুব অয়েল ও এইচআর প্লেট (ট্যাংক তৈরিতে ব্যবহৃত প্লেট) আমদানি দেখিয়ে এই অর্থ কোম্পানির ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছিল। তবে বাস্তবে বৈধ এলসি ও নিয়মিত ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় আসামি করা হয়েছে এসএওসিএলের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন, হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও তিন ব্যবসায়ী—মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মো. সোহেল রানা ও মো. মাসুদ মিয়াকে। এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ মাহমুদুল হককে ফোন করলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কোনো অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নন।

দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ব্যাংক বই, চেক রেজিস্টার, পেমেন্ট ভাউচার ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় একাধিক অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। সংস্থাটির অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমদানির ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের লেনদেন হয়। কিন্তু এ কোম্পানিতে আমদানির নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করা হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, পাঁচটি চেক ইস্যু করা হলেও প্রকৃত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাবে টাকা জমা হয়নি। বরং তিনটি চেকের অর্থ জমা হয়েছে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে। এগুলো হলো গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মেসার্স মদিনা কোয়ালিটি। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরন তেল বা উৎপাদন উপকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এ ছাড়া দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। এই নগদ উত্তোলনের সঙ্গে কোম্পানির এইচআর ও হিসাব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও বলা হয়েছে, আলোচিত লেনদেনগুলো কোম্পানির নিয়মিত হিসাব প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পেমেন্ট ভাউচার থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যয় জার্নাল ভাউচার বা জেনারেল লেজারে পোস্টিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পেমেন্ট ভাউচারগুলোতে নিরীক্ষা বিভাগের ছিল না।

দুদকের মতে, অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকলেও কোম্পানির তৎকালীন (২০১৮) পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ মৃত্যুবরণ করায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এসএওসিএলের দুই কর্মকর্তা ও তিন ব্যবসায়ী আমদানির কথা বলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এসএওসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম মামলার বিষয়ে বলেন, তিনি মামলা হওয়ার বিষয়টি এখনো জানেন না।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন