অবশেষে ‘গায়েবি’ ঋণ থেকে মুক্ত হচ্ছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারিটোলা গ্রামের ৩৩টি দরিদ্র পরিবার। করোনার প্রণোদনার কথা বলে এসব পরিবারের নামে জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা আহমেদুর রহমান। গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে ব্যাংকের স্থানীয় শাখার ব্যবস্থাপকের কক্ষে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে অভিযোগ স্বীকার করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের লিখিত অঙ্গীকারনামা দেন আহমেদুর রহমান।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংকের বাড়বকুণ্ড শাখার ব্যবস্থাপক মিটন ঘোষ, একই শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক বর্তমানে চট্টগ্রামের লালদীঘি শাখার ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজুর রহমান, অভিযুক্ত আহমেদুর রহমান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী, ছাত্রনেতা জাবের আল মাহমুদ, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও বাজার কমিটির নেতারা।
ব্যবস্থাপক মিটন ঘোষ জানান, সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইতিমধ্যে আহমেদুর রহমান ঋণের ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের যথাযথ নিয়ম মেনে এই ঋণগুলো নেওয়া হয়েছিল। প্রতারণা হয়ে থাকলে কতজনের সঙ্গে হয়েছে, সে বিষয়টি তাঁরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। যাঁদের সঙ্গে হয়েছে এবং যাঁরা করেছেন, তাঁরাই কেবল বলতে পারবেন। তবে কোনো ভুক্তভোগী তাঁদের কাছে প্রতারণার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি।
২২ আগস্ট প্রথম আলো অনলাইনে ‘সীতাকুণ্ডে ৫৫ হতদরিদ্র ‘গায়েবি’ ঋণের ফাঁদে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের অর্ধশতাধিক হতদরিদ্র মানুষের নামে ঋণের নোটিশ আসে। পরে ঋণ নেননি দাবি করে ভুক্তভোগীরা তাঁদের কাছে আসেন। দেখা যায়, ৩৩টি পরিবারের সদস্যদের নামে এক লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি করে ঋণ নেওয়া হয়েছে। মোট ঋণের পরিমাণ এক কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তাঁরা।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে কথোপকথন থেকে বোঝা যায় আহমেদুর রহমান এই ঋণগুলো নিয়েছেন। ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে চেকসহ বিভিন্ন নথিপত্র দিতে হয়। সেসব কাগজপত্রের বিপরীতে প্রণোদনার নামে প্রতিজন ভুক্তভোগীকে আহমেদুর রহমান দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আহমেদুর রহমান সব কটি ঋণ পরিশোধ করবেন। আর ভুক্তভোগীরা তখন যে টাকা প্রণোদনা মনে করে নিয়েছিলেন, সেই টাকা দুই বছরের সুদে-আসলে ফেরত দেবেন।
এই সিদ্ধান্তে মান্দারিটোলা গ্রামের ভুক্তভোগীদের পরিবারে স্বস্তি নেমে এসেছে। ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার ও তাঁর স্বামী ইমাম হোসেন বলেন, সংবাদমাধ্যমে তাঁদের এই দুরবস্থার কথা প্রচার না হলে খেয়ে না-খেয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হতো। এখন দুশ্চিন্তা কাটল।
আবদুল আলীম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, তাঁর পরিবারের নামে তিনটি ঋণের বিপরীতে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছিল আহমেদুর রহমান। এই টাকা তিনি কোনোভাবেই পরিশোধ করতে পারতেন না। সংবাদমাধ্যমে এসব বিষয় আসার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা প্রতারককে ধরেছেন। বৈঠকের পর তিনি চিন্তামুক্তভাবে ঘুমিয়েছেন বলে জানান।