পটুয়াখালীর দুমকি
সেতু সংস্কার হয়নি, ধুঁকছে মানুষ
উপজেলার ভাড়ানী খালের ওপর নির্মিত সেতুটি দুই বছর আগে ভেঙে পড়ে। এটি সংস্কার না করায় শিক্ষার্থীরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
পটুয়াখালীর দুমকির লেবুখালী হাবিবুল্লাহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন ভাড়ানী খালের ওপর নির্মিত লোহার সেতুটি দুই বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। এলাকাবাসী এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কিন্তু এখানে সেতু নির্মিত না হওয়ায় কয়েকটি স্কুলের কয়েক শ শিক্ষার্থীসহ পাাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এখন তারা খেয়ানৌকায় ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার হচ্ছে।
২৯ মে সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, লেবুখালী হাবিবুল্লাহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছের ওই পুরোনো লোহার সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে আছে। খালের পূর্ব পাড়ে এলাকার ঐতিহ্যবাহী হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লেবুখালী হাবিবুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লেবুখালী ১১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লেবুখালী ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়, হাসনাইনিয়া নুরানী ও হাফেজি মাদ্রাসা ও সাপ্তাহিক বাজার এবং পশ্চিম পাড়ে দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া, আলগী, নলদুয়ানী, লেবুখালী ও বাকেরগঞ্জের ভরপাশা ইউনিয়নের দুধালমৌ গ্রাম। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় পশ্চিম পারের বাসিন্দারা ইঞ্জিনচালিত খেয়ায় ভারানীর খাল ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। আবার অনেকে বিকল্প পথে প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করছে।
সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। সকালে দেখা যায় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন অভিভাবকও খেয়ায় তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসছেন।
খেয়াঘাটে কথা হয় লেবুখালী হাবিবুল্লাহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম তুবার সঙ্গে। মরিয়মের বাড়ি বাকেরগঞ্জের ভরপোশা ইউনিয়নের দুধালমৌ এলাকায়। এমনিতেই প্রতিদিন পায়রা সেতু পেরিয়ে চার কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ে আসতে হয় তাদের। এখানে এসে খেয়ায় খাল পাড়ি দিয়ে তাকে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। মরিয়ম বলে, খেয়ায় পারাপার হতে তাদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা নিচ্ছে। তবে খেয়া পারাপারের সময় ভয়ে থাকতে হয় তাকে।
মরিয়ম তুবার বাবা মাহাবুব আলম বলেন, তাঁদের এলাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় মেয়েকে এখানে দিয়েছেন। চার কিলোমিটার দূর থেকে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করে তাঁর মেয়ে। পায়রা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ভারানী খালেও তীব্র স্রোত থাকে।
তাই ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হতে হয়। এ কারণে মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠালেও তাঁকে চিন্তিত থাকতে হয়। তাই অনেক সময় নিজে মেয়ের সঙ্গে আসেন। তবে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে তাঁর মতো অনেক অভিভাবক চিন্তামুক্ত থাকতে পারতেন।
লেবুখালী হাবিবুল্লাহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, দুমকি উপজেলায় তাঁর বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে জাতীয়করণ হয়েছে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে দুমকির পাশাপাশি পাশের দুধালমৌ এলাকার শিক্ষার্থীরা এখানে লেখাপড়া করছে। এখানে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি ও কারিগরি শাখা রয়েছে। একসময় এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০–এর মতো শিক্ষার্থী ছিল। এখন তা কমে ৯৩৬ জনে ঠেকেছে।
প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী এই সেতু পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করত। সেতুটি ভেঙে পড়ায় এখন ঝুঁকি নিয়ে খেয়ায় কিংবা প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে পাগলা সেতু পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হারও কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে লেবুখালী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল ছালাম জানান, ২০০৯ সালে এখানে একটি ৬০ মিটার দীর্ঘ লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সেতুটির মাঝ বরাবর ভেঙে কাত হয়ে যায়। এলজিইডি তখন পুরোনো লোহার সেতুটি সংস্কার করে। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সেতুটির মাঝ বরাবর ট্রলারের ধাক্কায় ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ে যায়। এরপর সেতুটির ওপর দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এখানে নতুন করে একটি সেতু নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেতু না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার এলজিইডিকে জানানো হয়েছে।
এলজিইডির পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন বলেন, ‘আসলে ওই স্থানে লোহার সেতু টিকবে না। আমরা একটি গার্ডার সেতুর প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু দেখা যায় সেতুর উচ্চতা অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া সেতুর পশ্চিম পার লেবুখালী এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। তারাও জমি দিতে চাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত সেতুর উচ্চতা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় ওই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য বিশেষভাবে নকশা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’