প্লাস্টিকের বোতলে তৈরি পরিবেশবান্ধব বাড়ি

প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে পরিবেশবান্ধব এই বাড়ি তৈরি করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন শমসের আলী।

শেরপুরে কোমল পানীয়র প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন ‘বোতল বাড়ি’র সামনে বাড়ির মালিক শমসের আলী। গত শুক্রবার সদর উপজেলার সুলতানপুর উত্তর পাড়া গ্রামে
প্রথম আলো

শেরপুরে ফেলে দেওয়া কোমল পানীয়ের প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি তৈরি করেছেন এক গ্রাম্য কবিরাজ। সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের সুলতানপুর উত্তরপাড়া গ্রামের এই কবিরাজের নাম মো. শমসের আলী (৬৫)। এলাকায় তিনি ফক্কা কবিরাজ নামে পরিচিত।

পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে পরিবেশবান্ধব এই বাড়ি তৈরি করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন শমসের আলী। তাঁর বাড়িটি এখন ‘বোতল বাড়ি’ নামে পরিচিতি। আশপাশের অনেক মানুষ প্রায় প্রতিদিনই বাড়িটি দেখতে আসেন এখানে।

শমসের আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুবক বয়সে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কিন্তু বয়সের কারণে এখন সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে সদর উপজেলার সুলতানপুর উত্তরপাড়া গ্রামে নিজের জমিজমার দেখাশোনার কাজ করছেন তিনি। সেই সঙ্গে গ্রাম্য কবিরাজ হিসেবে মানুষকে নানা ধরনের সেবা দেন তিনি।

রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে বাড়িঘর তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এরই ধারাবাহিকতায় গতানুগতিকভাবে বাড়ি তৈরির পরিবর্তে নিজের বাড়িটি ভিন্নভাবে তৈরির চিন্তা মাথায় আসে তাঁর। এ চিন্তা থেকেই ইটের পরিবর্তে কোমল পানীয়ের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের খালি বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সে অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে শেরপুর সদরের বিভিন্ন ভাঙ্গারি দোকান থেকে কোমল পানীয়ের প্লাস্টিকের খালি বোতল সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। কয়েক মাস চেষ্টা করে প্রায় ৯ মণ খালি বোতল সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ৯ হাজার টাকা। এরপর হাত দেন বাড়ি তৈরির কাজে।

শমসের আলী বলেন, তাঁর বাড়িটির দৈর্ঘ্য ৭৮ ফুট ও প্রস্থ ১৩ ফুট। বাড়িটি তৈরির শুরুতে প্রাথমিকভাবে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করেন। এরপর প্লাস্টিকের বোতলগুলোয় বালু ও মাটি ভর্তি করে সিমেন্ট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি করেন। গাঁথুনির ওপরে দেন টিনের চাল। এভাবেই তৈরি হয় প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি, যা এলাকায় ‘বোতল বাড়ি’ নামে  পরিচিত।

শমসের আলী বলেন, বাড়িটি তৈরি করতে সময় লেগেছে দেড় মাস। আর সিমেন্ট, বালু, কাঠ, বোতল, রাজমিস্ত্রির বেতন মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, শুধু ইট-সিমেন্ট দিয়ে বাড়ি তৈরি করলে খরচ হতো প্রায় চার লাখ টাকা। কিন্তু পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এই বাড়ি নির্মাণে খরচ হয়েছে অনেক কম। বাড়িটি তৈরির সময় এলাকার অনেকেই এসে নির্মাণকাজ দেখতেন। দেয়ালে ইটের পরিবর্তে বোতল দেওয়ায় কেউ কেউ নেতিবাচক বা তির্যক কথা বলতেন। আবার বাড়িটি পরিবেশবান্ধব হবে জেনে অনেকেই প্রশংসা করতেন।

গত শুক্রবার সদর উপজেলার সুলতানপুর উত্তরপাড়া গ্রামে দেখা যায়, শমসের আলীর বোতলবাড়ির চতুর্পার্শ্বে আম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছ রয়েছে। এসবের মধ্যেই তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এই বাড়ি। বাড়িটির বাইরের দেয়ালে কোমলপানীয়ের বোতলের পেছনের অংশ আর ঘরের ভেতরের অংশে বোতলের মুখের অংশ রয়েছে। বৃষ্টি-বাদল থেকে রক্ষার জন্য ঘরের ওপর টিনের চাল দেওয়া হয়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও পরিবেশবান্ধব এই বাড়ির ঘরের ভেতরে গিয়ে ঠান্ডা অনুভূত হয়। এ সময় বাড়িটি দেখার জন্য কয়েকজন যুবক এখানে আসেন।

বোতলবাড়ি দেখতে আসা বাজিতখিলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, এই বাড়ির কথা তিনি আগেই শুনেছেন। তবে আজ দেখতে এসেছেন। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি বাড়িটি দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর, শেরপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মাহমুদ গত শনিবার বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করে। কিন্তু সেই প্লাস্টিককে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে শমসের আলী যে বাড়ি তৈরি করেছেন, তা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব। এ জন্য তিনি (শমসের) প্রশংসার দাবিদার। কোমল পানীয়ের প্লাস্টিকের বোতল যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে এসব বোতল সংরক্ষণ করে বাড়ি তৈরি বা অন্য কোনো ভালো কাজে ব্যবহার করলে আমরা পরিবেশদূষণের হাত থেকে রক্ষা পাব।’