এক মাস ধরে পানির নিচে সড়ক-উঠান, ভোগান্তিতে মানুষ

সড়কে জমে আছে পানি। এর মধ্যেই চলাচল করছে অটোরিকশা। সম্প্রতি বেগমগঞ্জের উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের সদাগর মার্কেট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বাড়ির চারপাশে হাঁটুপানি। চলাচলের কাঁচা সড়কও ডুবেছে। নূরুল আমিনের যাতায়াতের মূল ভরসা এখন ডিঙিনৌকা। গত এক মাস ধরে এভাবেই দিন কাটছে তাঁর। নূরুল আমিনের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামে। তাঁর অভিযোগ, ‘আগে বর্ষায় এলাকার খাল দিয়ে পানি বের হতো। এখন সব খাল দখল হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘরও নির্মাণ হয়েছে। কেউ কারও কথা শোনে না। তাই এখন পুরো এলাকা পানিবন্দী।’

অবশ্য শুধু নূরুল আমিন নয়। গত এক মাস ধরে তাঁর মতো অবস্থা বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকার মানুষের। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, এই উপজেলায় জনসংখ্যা ৬ লাখ ১১ হাজার ৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩২৫ জন।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার পূর্ব একলাশপুর, মধ্যম একলাশপুর, হাজীপুর, চৌমুহনী পৌরসভা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কই ডুবে রয়েছে পানিতে। দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় সড়কের অবস্থাও বেহাল। ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা সব জায়গায়  হাঁটু থেকে কোমরপানি। এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম বাহন এখন হয়ে উঠেছে ডিঙি নৌকা। অনেকেই বাড়ি থেকে মূল সড়ক পর্যন্ত চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তোলার কারণেই এমন দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।

উপজেলার আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাহারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের অর্ধেকের বেশি গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে। এতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তাঁরা।

জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার শিক্ষার্থীদেরও। পূর্ব একলাশপুর গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলে, প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় ইউনিফর্ম ভিজে যাওয়ায় স্কুলে যেতে পারে না সে। তার সহপাঠীরাও একই ভোগান্তিতে পড়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলে, তার অনেক সহপাঠী পানির কারণে বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। চারপাশে পানি থাকায় শৌচাগারও ব্যবহার করতে পারে না তারা।

এক মাস ধরে পানির নিচে সড়ক-উঠান, ভোগান্তিতে মানুষ । সম্প্রতি উপজেলার একলাশপুর এলাকা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাহনান সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ ও চলাচলের রাস্তায় পানি থাকায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। অন্তত ৮ থেকে ৯টি বিদ্যালয়ে এই অবস্থা। তবে শ্রেণিকক্ষে পানি না ওঠায় ক্লাস চলছে।

পানি থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছেন এসব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। উপজেলার সওদাগর মার্কেটের ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, পানির কারণে কেউ খুব দরকার না হলে বের হয় না, তাই বেচাকেনাও কমেছে।

উপজেলার হাজীপুর এলাকার রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, পানির কারণে মানুষ ঠিকমতো ঘর থেকেও বের হতে পারে না। এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতেই পানি ঢুকেছে। এ অবস্থায় সারা দিন রিকশা চালিয়ে ১০০ টাকা রোজগার করতেও কষ্ট হয়।

বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চৌমুহনীর বড় বড় খাল পরিষ্কার করেছি, অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ের পানি চলাচলের খালগুলো যতক্ষণ না দখলমুক্ত হবে, ততক্ষণ পরিস্থিতি উন্নত হবে না। স্থানীয়দের নিজেদের উদ্যোগে নিয়ে এগোতে হবে।’