স্বেচ্ছায় বিনা মূল্যে তরুণেরা জোগাড় করলেন দুই হাজার ব্যাগ রক্ত

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ‘বিরামপুর ব্লাড ব্যাংক’–এর কয়েকজন সদস্য
ছবি: সংগৃহীত

অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় ও বিনা মূল্যে দুই হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ‘বিরামপুর ব্লাড ব্যাংক’–এর সদস্যরা। শুক্রবার রাতে সংগঠনের এক সদস্যের রক্তদানের মধ্য দিয়ে এই মাইলফলকে পৌঁছায় সংগঠনটি।

বিরামপুর ব্লাড ব্যাংকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনটির নিজেদের কোনো রক্তের ব্যাগ, ক্যানুলা ও ব্লাড সেট নেই।  রক্তের ক্রস ম্যাচিং, স্ক্রিনিং কিট কিংবা রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেই তাদের। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমে রক্ত জোগাড়ের ব্যবস্থা করেন তাঁরা। শহরের কোনো নিবন্ধিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রক্তদাতা ও গ্রহীতাকে নিয়ে রক্তদানের ব্যবস্থাটি করে দিচ্ছেন সংগঠনের সদস্যরা। এতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন ১২ জন তরুণ। মহৎ উদ্যোগের জন্য এলাকায় তাঁরা ‘রক্ত বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত।

বিরামপুর ব্লাড ব্যাংকের সদস্য আরমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালের ২০ মে তিনি নিজে রক্ত দিয়ে ব্লাড ব্যাংকের এই রক্তদান কার্যক্রমের শুরু করেন। সর্বশেষ গতকাল রাতে ২ হাজার বার রক্ত দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ‘এ’ পজিটিভ ৪২৯ জন, ‘বি’ পজিটিভ ৫৫০ জন, ‘এবি’ পজিটিভ ২৩৭ জন, ‘ও’ পজিটিভ ৬৫৫ জন, ‘এ’ নেগেটিভ ৩৮ জন, ‘বি’ নেগেটিভ ৩৫ জন, ‘এবি’ নেগেটিভ গ্রুপের ১১ জন এবং ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের ৪৫ জন দাতা রক্ত দিয়েছেন।

২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বিরামপুর সরকারি কলেজ মিলনায়তনে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রক্তদাতাদের নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান করেছিল সংগঠনটি। এ বছরের ১৭ মার্চ উপজেলায় একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আয়োজিত গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে ‘শ্রেষ্ঠ মানব সেবার সংগঠন’ হিসেবে বিরামপুর ব্লাড ব্যাংককে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের তকিপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. রেজা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর অপারেশনের জন্য ‘এ’ পজিটিভ গ্রুপের দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন ছিল। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগ করেও রক্তের ব্যবস্থা হচ্ছিল না। পরে বিরামপুর ব্লাড ব্যাংকের এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি রক্তের ব্যবস্থা করে দেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল আমার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। আমার স্ত্রী ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছে। ব্লাড ব্যাংকের ভাইয়েরা আমার যে উপকার করেছেন, তা আমি জীবনেও ভুলব না।’

বিরামপুর ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রিন্স আরিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় রক্তের অভাবে কোনো অসহায়  মানুষকে যেন মারা যেতে না হয়, সে জন্য ২০০৯ সালের এসএসসি ব্যাচের কয়েকজন বন্ধু মিলে ২০১৪ সালে আমরা স্বেচ্ছায় রক্তদানে আগ্রহীদের নিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করি। তখন কারও রক্তের প্রয়োজন হলে নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে দিতাম। পরবর্তী সময়ে এ কাজ আরও ব্যাপক আকারে করার উদ্দেশ্যে ২০২০ সালের ১০ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি উন্মুক্ত গ্রুপ খুলি। বর্তমান গ্রুপটি পরিচালনায় আছেন শরিফুল আলম, আরমান আলী, ইরফান আনসারী সুমন, সোলায়মান আলী, আকিব আল আলতাফ, মোক্তাদির রাব্বি, আবদুল্লাহ আল মামুন, ওমর সাইবিন, ফরিদুল ইসলাম, রুবেল হোসেন ও শামসুন্নাহার।’

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিরামপুর ব্লাড ব্যাংকের একদল উদ্যমী ও স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের পরিশ্রমে এলাকার রক্তদাতাদারা বিভিন্ন সময়ে বিনা মূল্যে মানুষকে রক্ত দিয়েছেন। এটি তাঁদের অনেক বড় অর্জন। সংগঠনটির শুরু থেকে আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি। ২৬ মার্চের পর ২০০০তম রক্তদান উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁদের জন্য সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।’