ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সের সভায় হট্টগোল, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সের কার্যকরী সভায় হট্টগোল। সোমবার দুপুরে জেলা শহরের মসজিদ রোড এলাকায় অবস্থিত চেম্বার কার্যালয়ে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সে কার্যকরী কমিটির সভা চলার সময় একদল লোক ঢুকে হট্টগোল করেছেন। এ সময় চেম্বারের সচিব আজিম উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করে দুটি মুঠোফোন ও ১০ হাজার টাকা, হিসাবরক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে মারধর করে ২২ হাজার টাকা ও কম্পিউটারের এসএসডি কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে জেলা শহরের মসজিদ রোড এলাকায় অবস্থিত চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী জুলাই মাসে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স ‘এ’ শ্রেণির হওয়ায় এফবিসিআইয়ের কাছে ছয়জন ভোটারের নাম পাঠাতে বলা হয়েছে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে সভায় বসে চেম্বারের বর্তমান কমিটি। ছয়জন ভোটারের নাম নির্বাচন করতে সভায় বর্তমান ২০ সদস্যের কমিটির মধ্যে সাতজন কার্যকরী সদস্য সভায় বসেন। এতে উপস্থিত ছিলেন চেম্বারের সভাপতি আজিজুল হক, সহসভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর ও বাবুল মিয়া, পরিচালক আজিজুর রহমান, জুয়েল খান, তানভির আহমদ, জাবেদুল ইসলাম।

চেম্বার অব কমার্স ও চেম্বারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভা চলার সময় একদল বহিরাগত লোক অতর্কিতভাবে চেম্বারে প্রবেশ করে সভা বন্ধ করতে বলেন। তাঁদের সঙ্গে চেম্বারের সদস্য কাজল মিয়াসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে তাঁরা চেম্বারের সভাপতি আজিজুল হকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এ নিয়ে চেম্বারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটি ও হট্টগোল হয়। বহিরাগতরা এক পর্যায়ে কক্ষে ঢুকে চেম্বারের সচিব আজিম উদ্দিনকে লঞ্ছিত করে ড্রয়ার থেকে দুটি মুঠোফোন ও ১০ হাজার টাকা, আরেকটি কক্ষে ঢুকে ভয় দেখিয়ে অফিস সহায়ক দুলাল মিয়ার মাধ্যমে কম্পিউটারের এসএসডি কার্ড ও একই কক্ষের হিসাবরক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে টেনেহিঁচড়ে বের মারধর করেন। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়ে যান তাঁরা। খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

ঘটনার ১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সভাপতি আজিজুল হকসহ সাতজন সভা করছিলেন। এ সময় চেম্বারের সদস্য কাজল মিয়াসহ কয়েকজনকে সভায় ঢুকতে দেখা গেছে। কাজল সভাপতি আজিজুলের দিকে এগিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক সভার রেজল্যুশন খাতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। চেম্বারের অন্য সদস্যদের বাধার কারণে তিনি তা নিতে পারেননি। সবাই বসে কথা বলতে বললেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।

চেম্বারের হিসাবরক্ষক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একদল লোকজন চেম্বারে আসেন। আমাকে কক্ষ থেকে বের করে মারধর করেন। টানাহেঁচড়ায় শার্টের বোতাম ছিঁড়ে গেছে। তারা (হামলাকারীরা) পকেট থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।’
চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর জেলা চেম্বার অব কমার্সের বর্তমান কমিটি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চেম্বারের বর্তমান কমিটিকে বাতিল করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চেম্বারের সভাপতি এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের একটি রিট আবেদন করেন। উচ্চ আদালত গত ১০ মার্চ প্রশাসক নিয়োগ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। এ বিষয়ে স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন চেম্বারের সদস্য মাসুদুর রহমান খান। পরে উভয় পক্ষকে দুই মাসের জন্য স্থিতাবস্থা রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। চেম্বারের সহসভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চেম্বার পরিচালনা করছে বর্তমান কমিটি। আপিল বিভাগ উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। তাই বর্তমান কমিটি ফাংশনাল থাকবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সদস্য কাজল মিয়া প্রথম আলোকে জানান, চেম্বারের বর্তমান কমিটির অধিকাংশরাই আওয়ামীপন্থী লোক। তাঁরা চেম্বারে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও চুরি করেছেন। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সভাপতি আজিজুল হক, সহসভাপতি কাজী জাহাঙ্গীরসহ অধিকাংশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আর ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁরা কোনো সভা করেননি। কাজল মিয়া বলেন, ‘জেলার নাগরিক ও ব্যবসায়ী হিসেবে অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা আমার দায়িত্ব। সাদাকে সাদা ও কালাকে কালা বলতে হবে। তাঁরা সভা করতে পারেননি। পাঁচ মিনিট বসেই চলে গেছেন। তাঁরা সভা করতে চাইলে সবাইকে জানিয়ে সভা করুন। এভাবে চুপিসারে কেন।’

জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভা করে চলে আসার পর একদল লোক চেম্বারে ঢুকে সচিব আজিম উদ্দিনকে লাঞ্ছিত ও হিসাবরক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে মারধর করে। তাঁদের কাছ টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে গেছে। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের আমরা শনাক্ত করতে পারিনি।’

দুই মাসের মধ্যে সভা করতে হয় এবং ৫ আগস্টের পর মামলার কারণে নিয়মিত সভা হয়নি প্রসঙ্গে আজিজুল বলেন, ‘আমরা কার্যক্রম চালাইতেছি। কিন্তু মাসুদুর রহমানসহ তাঁরা মামলা করেছেন, যা চলমান রয়েছে।’

চেম্বারে হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল বলে জানান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোজাফফ হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, চেম্বারে আওয়ামীপন্থী সদস্যরা সভা করতে এসেছিলেন। দুই থেকে আড়াই মিনিট বসে তাঁরা চলে গেছেন। সভাপতি-সহসভাপতিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বিএনপিপন্থী চেম্বারের সদস্যরা সেখানে যান। সভা করেছেন কি না রেজল্যুশন দেখতে চান। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির তথ্য পাওয়া গেছে। চেম্বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে গেছেন। কিন্তু কারা করেছেন, কেউ কিছু বলতে পারেননি। মারধরের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।