দুই বাংলার দূরত্ব ঘোচাল রংপুরের লিটলম্যাগ মেলা

সাহিত্য সংগঠন ফিরেদেখা দুই বাংলার কবি–সাহিত্যিকদের অংশ গ্রহণে লিটলম্যাগ মেলার আয়োজন করে। গত শনিবার বিকেলে রংপুরে টাউন হল চত্বরেছবি: প্রথম আলো

প্রথমবারের মতো রংপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে হয়ে গেল লিটলম্যাগ মেলা। এপার বাংলা-ওপার বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা যেন প্রাণের মেলায় রূপ নেয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দুই শতাধিক কবি-সাহিত্যিকেরা জড়ো হয়েছিলেন মেলায়।
অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য আসা অতিথিদের জন্য ছিল এ অঞ্চলের দেশীয় খাবার। ছিল আবাসন সুবিধাও। খাবারের মেনুতে ছিল রংপুর অঞ্চলের শিল আলুর ভর্তা, ডিম খিচুড়ি, দেশীয় জাতের মাছ, সবজি, ডিম ভুনা, বেগুনভাজা, বাটা মাছ, ব্রহ্মপুত্রের বৈরালি ও পাবদা মাছ প্রভৃতি। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অতিথিদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল স্থানীয় দুটি হোটেলে।

রংপুরে ফিরেদেখা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দশকপূর্তি উপলক্ষে এই প্রথমবারের মতো লিটলম্যাগ মেলা ও কবিতা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী উৎসব ছিল গত শনিবার রাত পর্যন্ত।
উৎসবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২০ জন কবি লিটলম্যাগ সম্পাদকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুই শতাধিক অতিথি কবি ও লিটলম্যাগ সম্পাদক অংশগ্রহণ করেন।
কলকাতা থেকে আসা গবেষক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও দেশকাল পত্রিকার সম্পাদক সৌমিত্র দস্তিদার লিটলম্যাগ মেলায় উপস্থিত হতে পেরে খুবই আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘রংপুর লিটলম্যাগ মেলা ও কবিতা উৎসব আয়োজনের ফলে বাংলা ভাষাভাষীদের বহুমাত্রিক ভাবের আদান-প্রদানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াই বাংলাদেশকে জানব বলে, এই লিটলম্যাগ মেলা সেই কাজটি সহজ করে দিয়েছে।’
ভারতের উত্তরবঙ্গ থেকে আসা কবি ও উত্তরভূমিকা পত্রিকার সম্পাদক গৌরাঙ্গ সিনহা বলেন, রংপুরের ফিরেদেখা’র আমন্ত্রণে এই প্রথম বাংলাদেশ, আমার পিতৃভূমিতে আসার সুযোগ হলো। ৬০ বছর আগে যে ভূমি ছেড়ে গেছিলাম, সেই ভূমিতে আসার প্রথম সুযোগ। আসার কিছুক্ষণ পর মনে হলো আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। দূরত্ব কেবল কাঁটাতারের।

লিটলম্যাগ মেলায় অংশ নিতে আসা দুই বাংলার সাহিত্যিকদের একটি দল রংপুর নগরের ঐতিহাসিক মন্থনা জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখে
ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া তিন দিনব্যাপী আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে আলোচক ছিলেন দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ভারতের লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার, কবি বিধানেন্দু পুরকাইত, কবি অভীক কুমার দে, গৌরাঙ্গ সিনহা, স্বপন কুমার সরকার বাংলাদেশের কবি আরিফুল হক কুমার, কবি শোয়েব শাহরিয়ার, কবি ও সম্পাদক রাজা শহীদুল আসলাম, কবি শিবলী মোকতাদির, লেখক মনোয়ারা বেগম, কথাসাহিত্যিক নুরুন্নবী শান্ত, ফিরেদেখা’র সভাপতি সাহিনা সুলতানা প্রমুখ।
উৎসবের শেষ দিন গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় টাউন হল চত্বরে আয়োজিত স্মারকপত্রের মোড়ক উন্মোচন পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান।

এ ছাড়া তিন দিনব্যাপী লিটলম্যাগ মেলা ও কবিতা উৎসবে প্রতিদিনই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলা শেষ হওয়ার পর আজ রোববার আসা অতিথিদের রংপুর জাদুঘর, কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়ার পৈতৃক বাড়ি, দেবী চৌধুরানীর বাড়ি, নূরলদীনের স্মৃতিবিজড়িত মিঠাপুকুর, তিস্তা, মাহিগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে দেখানো হয়।
প্রথম দিন বৃহস্পতিবার লিটলম্যাগ মেলা ও কবিতা উৎসবের উদ্বোধন করেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন রংপুর লিটলম্যাগ মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব ও আয়োজক সংগঠন ফিরেদেখা’র সাধারণ সম্পাদক সাকিল মাসুদ।