গাজীপুরে শতবর্ষী দেশি মুরগির হাট

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে কয়েকটি সারিতে দেশি মুরগি বিক্রি করতে বসেন শতাধিক বিক্রেতাছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গাজীপুরের শ্রীপুরে জমে উঠেছে দেশি মুরগির হাট। উপজেলার শতবর্ষী বরমী বাজারের একটি অংশে এই হাট বসে।

বুধবার সকালে বরমী বাজারের মুরগির হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েকটি সারিতে দেশি মুরগি বিক্রি করতে বসেছেন শতাধিক বিক্রেতা। সামনে দেশি বিভিন্ন বয়সী মোরগ-মুরগি সাজানো। বাজারের একপাশে পাইকারেরা বিপুলসংখ্যক মুরগি কিনে জড়ো করেছেন। বাজারে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভিড় বেশি। ক্রেতারা একেকটি মুরগি হাতে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। পছন্দ হলে দাম–দর করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। একেকটি মুরগি আকার ও ওজনভেদে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোরগের দাম ছোট আকারের হলে একেকটি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আর বড় হলে ওজন অনুযায়ী একেকটি ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগই বাড়িতে পালা দেশি মুরগি সাপ্তাহিক হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। অন্যরা পাইকারি বিক্রেতা। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করেন তাঁরা।

বরমী ইউনিয়নের গাড়ারণ গ্রামের মো. নাজমুল ইসলাম দুটি মোরগ বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ঈদের বাজারে বিক্রির জন্য মোরগগুলো লালন–পালন করেছেন। দুটি মোরগ অন্তত ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তাঁর।

বরমী বাজারে সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার মুরগির হাট বসে
ছবি: প্রথম আলো

বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি ঈদের বাজারে ৬টি মুরগি বিক্রি করেছেন। মুরগি বিক্রির ৩ হাজার টাকা প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটায় খরচ করবেন তিনি। শহীদ উল্লাহ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, বাড়িতে পালা ৪০টি মুরগির মধ্যে এই ঈদের বাজারে অর্ধেক বিক্রি করে দেবেন। তাই বরমী হাটে ঈদের আগে দুই হাটবারে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) মুরগি বিক্রি করছেন তিনি।

মুরগির পাইকারি ক্রেতা মো. শামসুর রহমান বলেন, ঈদের বাজারে মুরগি কেনার জন্য বরমী বাজার আদর্শ। এখান থেকে মুরগি কিনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করলে ভালো লাভ করতে পারেন তিনি। আরেক পাইকার আবদুস সাত্তার বলেন, ঈদে খুচরা বিক্রেতারা একেকটি মুরগির দাম সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি চাচ্ছেন। তবে দাম বেশি হলেও প্রচুর মুরগি পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে মুরগি পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করেন কিছু ব্যবসায়ী
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আল আমিন বলেন, ঈদে অনেক পরিবারেই দেশি মোরগ-মুরগির চাহিদা থাকে। ভালো মানের দেশি মুরগির মাংস রান্না করে প্রিয়জনদের আপ্যায়ন করার রীতি এখনো সমাজে প্রচলিত আছে। তাই ঈদকে ঘিরে, বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশি মুরগির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এ ছাড়া শতবর্ষ পুরোনো বরমী হাটের মুরগিমহল আশপাশের কয়েক উপজেলাজুড়ে ব্যাপক পরিচিত।

দেশি মুরগির পাইকারি কেনাবেচা করেন মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি বরমী বাজারের দুটি হাটবারের নিয়মিত পাইকার। তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে প্রতি হাটে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার দেশি মোরগ–মুরগি বিক্রি হয়। ঈদের মতো উৎসবের আগে বিক্রি দ্বিগুণ হয়।

এই হাটে ঘরে পালা মোরগ–মুরগি নিয়ে আসেন স্থানীয়রা
ছবি: প্রথম আলো

বরমী ধানমহল এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আহসান উল্লাহের দাবি, ঈসা খাঁর আমল থেকে বরমী বাজার শুরু হয়েছে। তিনি তাঁর দাদার কাছে এই বাজারের কথা শুনেছেন। পাশেই বানার নদ। পণ্য পরিবহন সহজ হওয়ায় বাজারটি আশপাশের কয়েক জেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে সড়কপথে যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় এখন বাজারটির গুরুত্ব কিছুটা কমেছে। আশপাশের কয়েক উপজেলা থেকে মোরগ–মুরগি এনে এই বাজারে বিক্রি করা হয়।