৪ প্রার্থী আওয়ামী লীগের, তবু ‘চুপ’ শীর্ষ নেতারা

উপজেলাটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি তেমন শক্ত নয়। ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ৬৭ সদস্যের কমিটি হয়।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনপ্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বাকি আছে আর ৬ দিন। চেয়ারম্যান পদের ছয় প্রার্থীর মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের নেতা। তবে নির্বাচন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তেমন তৎপরতা নেই। এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে ভোট চাইতেও দেখা যায়নি তাঁদের।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের নীরব অবস্থানের সরাসরি প্রভাব পড়েছে দলীয় কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও। এ কারণে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে প্রার্থীদের হিমশিম খেতে হবে।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর আমি এক দিনের জন্যও কটিয়াদী যাইনি। ভোটের আগে যাবও না। কারও পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেব না।
সোহরাব উদ্দিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য

কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দলের নেতারা নির্বাচন নিয়ে চুপ আছেন। কারও পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেননি। কারও মঞ্চে ওঠেননি। ভোটে কে জিতবে, কিংবা কে হারবে—এ নিয়ে বাড়তি চিন্তা নেই কারোর।’

আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচয় আছে—এমন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আলী আকবর (দোয়াত–কলম), জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মঈনুজ্জামান (ঘোড়া), তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. কামরুজ্জামান (কাপ-পিরিচ) ও কটিয়াদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শেখ দিলদার (মোটরসাইকেল)। চারজনের মধ্যে আলী আকবর একবার কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মঈনুজ্জামান অপুর বাবা আসাদুজ্জামান ছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

অপর দুই প্রার্থী হলেন, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের ছেলে সাব্বির জামান (কই মাছ) ও ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম (আনারস)। আলী আকবর ও মঈনুজ্জামান ছাড়া অপর চার প্রার্থী প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামও কারও পক্ষে প্রচারণায় নামেননি। অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনও নীরব। তাঁর নীরব সমর্থন কোন প্রার্থীর পক্ষে—দলীয় নেতারা তা ধারণা করতে পারছেন। তবে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে তাঁর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। সোহরাব উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর আমি এক দিনের জন্যও কটিয়াদী যাইনি। ভোটের আগে যাবও না। কারও পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেব না।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি তেমন শক্ত নয়। ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হয়। ৬৭ সদস্যের ওই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ জন এরই মধ্যে মারা গেছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের বড় একটি অংশ এখন দলে নিষ্ক্রিয়।

অনেকে স্থায়ীভাবে দল ছেড়েছেন। কেউ কেউ প্রবাসে আছেন। হাতে গোনা কয়েকজন সক্রিয় থাকলেও তাঁদের মধ্যে আছে দ্বন্দ্ব। এই অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ঘোষণায় ভারমুক্ত হন। তবে দলে আর গতি ফেরেনি। ফলে প্রতিটি নির্বাচনে দলীয় অবস্থান নড়বড়ে থাকে। নানা জটিলতার কারণে প্রার্থীরাও শীর্ষ নেতাদের দলে টানার ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী থাকেন না। এবারও ব্যতিক্রম নয়। এ কারণে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নির্বাচনের মাঠে দেখা যাচ্ছে না।