খুলনা সিটি ওয়ার্ড পরিক্রমা
জলাবদ্ধতায় যত ভোগান্তি
বাস্তুহারা এলাকার পানিনিষ্কাশনের খালটি বন্ধ। অন্য এলাকার পানি এসে জমা হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই, নেই কোনো গ্রন্থাগার বা ব্যায়ামাগার।
বয়রা হাউজিং ও বাস্তুহারা এলাকার সড়কগুলো নাজুক। সেখানকার সড়কবাতিও প্রায়ই জ্বলে না।
খুলনা নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাস্তুহারা এলাকার বাসিন্দা মো. নাসিরউদ্দীন। তাঁর ওয়ার্ডের ভালো-মন্দ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে কিছু উন্নয়নকাজ হয়েছে। মাদকের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। তবে জলাবদ্ধতা সংকটের নিরসন হয়নি। এলাকায় মশার উপদ্রব ব্যাপক। এলাকার শিশুপার্ক দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আর ছাতা পার্কের ছাতাগুলো ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।
খুলনা সিটির এই ওয়ার্ডে লাখখানেক মানুষের বাস। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব সমস্যা ছাপিয়ে তাঁদের কাছে মুখ্য এখন জলাবদ্ধতার বিষয়টি। ওয়ার্ডটির পূর্বে গোয়ালখালী কবরস্থান, পশ্চিমে রায়েরমহল সেতু, উত্তরে বিজিবি ক্যাম্প, দক্ষিণে বৈকালী বাজার। বেশির ভাগ জায়গার ড্রেনেজব্যবস্থাই বিকল। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা। আছে মশার উপদ্রব। নেই খেলার মাঠ। এলাকার পুকুরগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু রাস্তাঘাট হলেও এখনো অনেক রাস্তা খুবই বেহাল।
মৃতপ্রায় খালটি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারছে না। মশার প্রজননক্ষেত্রও এখন এই খাল।
গত কয়েক দিন ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ওয়ার্ডের মুজগুন্নী মহাসড়ক, শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল পেরিয়ে বাস্তুহারা কলোনি। এখানের সড়কগুলো কংক্রিটের। এ সড়ক থেকে নেমে গেছে ছোট ছোট গলি। কোনোটি ইট বিছানো, কোনোটি কংক্রিটের, আবার কোনোটি সম্পূর্ণ কাঁচা। এসব এলাকায় বাস করছেন প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ। সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায় এলাকাটি।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তুহারা এলাকার পানিনিষ্কাশনের খালটি বন্ধ। এ ছাড়া অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণের কারণে পানি নামতে পারে না। অন্য এলাকার পানি এই অঞ্চলে এসে জমা হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের বাস্তুহারা খাল ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালে বর্জ্যের কারণে পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ। এ ছাড়া খালটি ঘাস, আগাছা ও জলজ উদ্ভিদে পূর্ণ। মৃতপ্রায় খালটি শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। মশার প্রজননক্ষেত্রও এখন এই খাল।
ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমানও জলাবদ্ধতাকেই ওয়ার্ডের মূল সমস্যা মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই ওয়ার্ডের মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা। পার্শ্ববর্তী সাতটি ওয়ার্ডের পানি এই ওয়ার্ডের বাস্তুহারা খাল দিয়ে ক্ষুদের খালে গিয়ে পড়ে। বাস্তুহারা খালটি শিগগিরই খনন হবে। আর এই ওয়ার্ডের দুই পাশে দুটি বড় ড্রেন হবে। এই দুটি ড্রেন তথা খাল খনন করতে পারলে শুধু এই ওয়ার্ড না, খালিশপুর অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন হবে।
ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ার্ডের গোয়ালখালী, মুজগুন্নী, বাস্তুহারা এলাকায় বেশ কিছু ভালো সড়ক হয়েছে। তবে অনেক সড়ক এখনো খারাপ। বয়রা হাউজিংয়ের বি ও ডি-ব্লক এবং বাস্তুহারা এলাকার সংযোগ সড়কগুলো খুবই নাজুক। সেখানকার সড়কবাতিও প্রায়ই জ্বলে না। ওয়ার্ডে করপোরেশনের কোনো পুকুর নেই। ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই, নেই কোনো গ্রন্থাগার বা ব্যায়ামাগার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বয়রা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ড্রেনেজব্যবস্থা খুবই খারাপ। আগে ড্রেন ছিল না, তবে রাস্তায় হাঁটা যেত। এখন ড্রেন উঁচু হওয়ায় রাস্তা হয়ে গেছে ড্রেন। আবার ড্রেন যথাসময়ে পরিষ্কার করা হয় না। রাস্তাঘাট একেবারে গ্রামের রাস্তার চেয়ে খারাপ। এলাকায় সড়কবাতি নেই বললেই চলে।’
অভিযোগ আছে, বর্তমান কাউন্সিলর ঠিকাদার হওয়ায় ওয়ার্ডের অনেক কাজ তিনি নিজেই করেন। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ঠিকাদারি আমার পেশা। তবে আমি যখন থেকে এই ওয়ার্ডে রাজনীতি শুরু করেছি, তখন থেকেই কাজ তো দূরের কথা, এই ওয়ার্ডের কোনো কাজে আমি দরপত্র ফেলিনি।’
শেখ জাহিদুল ইসলাম ২০১৩ সালে এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ছিলেন। গতবারও তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এবার প্রার্থী হচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির এই নেতা বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে চান না।
কাজী সরয়ারউল আযম ১৯৯৪ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কাউন্সিলর ছিলেন। তিনিও বলেন, জলাবদ্ধতাই এই এলাকার প্রধান সমস্যা। । নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স হয়ে গেছে। তবে এলাকার মানুষ বারবার বলছে। ঈদের পর একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারব।’