গাজীপুরসহ তিন জেলায় ৭–১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং

রোববার থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ।

দেশজুড়ে চলছে লোডশেডিং। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপাকে মানুষজন। বিদ্যুৎ না থাকায় চার্জার লাইটের আলোয় চায়ের দোকান চালাচ্ছেন আবদুল হক। গতকাল রাত পৌনে আটটায় সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আগের মতোই অবনতিশীল ছিল। এ তিন জেলায় ৭ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। তবে অবস্থার উন্নতি দেখা গেছে রাজশাহী ও রংপুরে।

প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

গাজীপুরে রোববার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে লোডশেডিংয়ের শিকার হয়ে দুর্ভোগ পোহান মানুষ। তবে গ্রামের তুলনায় শহরে লোডশেডিং কিছুটা কম ছিল।

৪৬২ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ২২৫ মেগাওয়াট। এতে এলাকাভিত্তিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
যুবরাজ চন্দ্র পাল, মহাব্যবস্থাপক, গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১

সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুরের ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, রোববার বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। পরে রাত নয়টায় আবার বিদ্যুৎ ছিল না আধা ঘণ্টার মতো। রাত ১১টায় আবার বিদ্যুৎ যায়। গতকালও সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টানা বিদ্যুৎ ছিল না।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) যুবরাজ চন্দ্র পাল বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ ও জয়দেবপুর এলাকায় শিল্পকারখানা এবং অফিস–আদালতের সংখ্যা বেশি। এখানে ৪৬২ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ২২৫ মেগাওয়াট। এতে এলাকাভিত্তিক সাত থেকে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

নেত্রকোনায় পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকায় দিনে ও রাতে ১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় টানা চার ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়। শহরে কিছুটা কম হলেও নির্ধারিত সময়সূচির বাইরেও লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামে।

নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ জেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক আছেন ছয় লাখ ছয় হাজার। প্রতিদিন ১০৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ৪৩ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। রোববার সকাল থেকে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। তা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ছিল ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা।

নেত্রকোনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের চাহিদার ৭০ শতাংশ সরবরাহ ধরে শিডিউল করতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমরা এলাকাভেদে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং রেখে শিডিউল করেছিলাম। কিন্তু এখন অর্ধেক সরবরাহই পাচ্ছি না।’

এদিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, সেখানে দিন–রাত মিলিয়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তারাকান্দা উপজেলার লারমা গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ আসে আর যায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি সেখানে রাতের বেলায় বিদ্যুতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩–এর মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম আলম বলেন, ময়মনসিংহের ছয়টি উপজেলার জন্য গড় চাহিদা ৮৮ মেগাওয়াট; তবে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০ মেগাওয়াট।

রাজশাহী ও রংপুরে উন্নতি

রাজশাহীতে গত রোববার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত শহর থেকে গ্রাম কোথাও তেমন বিদ্যুৎ–বিভ্রাট (লোডশেডিং) ছিল না। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের চাহিদার প্রায় সমান বিদ্যুৎ পেয়েছে। আবার জেলা সদরসহ কয়েকটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) চাহিদা ও সরবরাহ একই ছিল। তবে দু-একটি এলাকায় কিছু লোডশেডিং হয়েছে। তানোরের উচ্চাডাঙ্গা নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা দেবেন্দ্রনাথ টুডু (৩২) বলেন, রোববার সন্ধ্যায় ৫ থেকে ১০ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না, গতকাল সারা দিন বিদ্যুৎ যায়নি। দুর্গাপুরের তিওরকুড়ি লক্ষ্মীপুর গ্রামের চম্পা বেগম (৩৫) বলেন, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে এক ঘণ্টার কিছু বেশি বিদ্যুৎ ছিল না। তবে গতকাল সারা দিন বিদ্যুৎ ছিল।

রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. একরামুল হক জানান, সোমবার দুপুর ১২টায় তাঁদের চাহিদা ছিল ৪৩ মেগাওয়াট; সরবরাহও প্রায় একই ছিল। আবার বেলা ৩টায় চাহিদা ছিল ৪৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল একই। বৃষ্টির কারণে ওই সময়ে জমিতে সেচ কম দিতে হয়েছে। সে জন্য লোডশেডিং করতে হয়নি বলে জানান তিনি।

রংপুরে গত দুদিন শহর ও গ্রামাঞ্চলে ১৫ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, আগে এ বিভ্রাটের পরিমাণ বেশি ছিল।

মিঠাপুকুর বন্দর বাজার এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, রোববার রাতে ও গতকাল সকালে বিদ্যুৎ যায়নি। আগের মতো এ দুদিন তেমন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে না বলে জানান গঙ্গাচড়ার আরাজি নিয়ামত এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামও।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২–এর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাতে তাদের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৯১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে তাদের ঘাটতি ছিল যথাক্রমে ১৬ ও ১০ মেগাওয়াট।

রংপুর নেসকোর কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর নগরে গতকাল প্রায় ৭০ মেগাওয়াট চাহিদার পুরোটাই পেয়েছে তারা।