দু্‌ই সন্তানের জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে পারছেন না রিকশাচালক

নীলফামারীর সৈয়দপুরের ওমর ফারুকের দুই সন্তান আবদুল্লাহ মিয়া ও ফাহমিদা আক্তার জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

রিকশাচালক ওমর ফারুকের দুই শিশুসন্তান আবদুল্লাহ মিয়া (৭) ও ফাহামিদা আক্তার (৪) জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত। অনেক কষ্টে ধারদেনা করে তাদের স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়েছিলেন। চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন, ঢাকায় নিয়ে বড় বড় চিকিৎসককে দেখাতে হবে। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বড় চিকিৎসক দেখাবেন, সেই সামর্থ্য ওমর ফারুকের নেই। এ কারণে এক বছর ধরে বন্ধ আছে শিশু দুটির চিকিৎসা।

ওই হতদরিদ্র রিকশাচালকের নাম ওমর ফারুক। তাঁর বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচণ্ডী ইউনিয়নের সোনাপুকুর নয়া মোল্লাপাড়া গ্রামে।

সরেজমিনে ওমর ফারুক বলেন, ‘জন্মের পর থেকে আমার দুই ছেলে-মেয়ে জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত। তাদের গায়ের চামড়া ফেটে যাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাদের পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করার পর অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। দুই শিশুর জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না।’

ওমর ফারুক প্রথমে তাঁর দুই সন্তানকে চিকিৎসার জন্য রংপুরের নর্দান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ফাহিম কিশওয়ার কাছে নিয়ে যান। ফাহিম কিশওয়া বলেন, রোগটি বিরল। এতে আক্রান্ত রোগীরা অনেক কষ্ট পেয়ে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগী অক্ষম হতে যেতে পারে। রোগীদের অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। ভারতের দিল্লিতে চর্ম ও যৌন রিসার্চ সেন্টারে এ রোগের চিকিৎসা হতে পারে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে জানান তিনি।

ওমর ফারুক আরও বলেন, চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছেন তাঁর দুই সন্তানের চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে আট লাখ টাকা প্রয়োজন। তাদের চিকিৎসার খরচ তাঁর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়।

শিশু দুটির মা খালেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার দুই সন্তান অজানা রোগে আক্রান্ত। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু কোনো উপকার পাইনি। টাকার অভাবে এক বছর ধরে চিকিৎসা করাতে পারছি না। দুটি সন্তানের একই সমস্যা। তাদের দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। গরমকালে তাদের সমস্যা বেশি হয়, শীতকালে একটু কম। আমার স্বামীর আয় কম। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সন্তান দুটির চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চাই।’

রিকশাচালক ওমর ফারুকের দুই সন্তান কী রোগে আক্রান্ত জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘শিশু দুটির ছবি দেখে বুঝতে পেরেছি, এটি একটি জটিল চর্মরোগ। আমি মনে করি, তাদের চিকিৎসা উচ্চতর প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগে করলে ভালো হবে। সেখানে তারা সঠিক চিকিৎসা পাবে বলে মনে করি।’