শিশুদের অপহরণের হুমকি দিয়ে বাড়ি বাড়ি সাঁটানো হয়েছে পোস্টার

অপহরণের হুমকি দিয়ে কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে চাঁদা চেয়ে চার শতাধিক বাড়ির ফটকে বেনামি পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। আজ রোববার সকালে পোস্টার দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামজুড়ে। বাড়ি বাড়ি সাঁটানো পোস্টারে ৬ অক্টোবরের মধ্যে গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে সোলারের খুঁটির সঙ্গে রাখা বাক্সে ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

এদিকে অপহরণ আতঙ্কে গ্রামবাসী তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। কর্মজীবী অনেকেই আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হননি। খবর পেয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ, সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ, কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হতে এলাকায় মাইকিং করেছে পুলিশ।

ওসি মাহমুদ হাসান বলেন, সন্তান অপহরণের হুমকি দিয়ে বাড়ি বাড়ি পোস্টারিং করায় আতঙ্কে অনেকেই আজ সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি। অনেকে আবার কাজেও যাননি। গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

সাঁটানো পোস্টারে লেখা আছে, ‘৬ তারিখের মধ্যে টাকা দিতে হবে। না হইলে ৭ তারিখ থেকে আপনাদের ছেলেমেয়ে হারায় গেলে আমার কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে—সেটা না খুঁজে, আমি যা বলছি, সেটা করার চেষ্টা করেন। তাহলে কিচ্ছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলবেন না। যদি ছেলেমেয়েদের মঙ্গল চান, তাহলে লোয়া পুকুর সোলার লাইটের সাথে যে বক্স থাকবে; নিজের টাকার সঙ্গে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে ওই বক্সে ফেলান। আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত করুন। ধন্যবাদ—ভালো থাকবেন, ৬ তারিখ পর্যন্ত আল্লাহ হাফেজ। বি.দ্র. এই কাগজ আপনি পড়ছেন, তাহলে মনে করেন আপনার ছেলেমেয়েকে তুলে আনতেও পারব। দয়া করে টাকাটা দিয়েন, আমার ছেলেগুলা ভালো না।’

বিষ্ণুপুর গ্রামের মাঝগাড়িপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, হিন্দুপাড়া ও মোল্লাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চারটি পাড়ায় বিভিন্ন বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা পোস্টার সাঁটানো। পোস্টারে বাড়ির গৃহকর্তার সামর্থ্য অনুযায়ী, ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, গতকাল শনিবার রাতের আঁধারে কে বা কারা প্রতিটি বাড়ির ফটকে সন্তান অপহরণের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে পোস্টার সাঁটিয়েছে। আজ সকালে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার দেখে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রাসেল ইবনে নূর নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কর্মজীবী। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ কাঠমিস্ত্রি, আবার কেউ বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। গৃহকর্তার সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দাবি করা হয়েছে। কার কেমন পারিবারিক অবস্থা, পোস্টারিং করা ব্যক্তিরা আগে থেকেই জানেন। ধারণা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে গ্রামের কেউ জড়িত।

এদিকে সন্তান অপহরণের ভয়ে গ্রামবাসীর অনেকে সন্তানদের আজ স্কুলে পাঠাননি। জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, সন্তানকে অপহরণের হুমকি দেওয়ায় ভয়ে অনেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি। অনেকেই সন্তানদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। গ্রামের গৃহবধূ জাহানারা বেগম বলেন, ‘অপহরণের হুমকি দেওয়ায় ছেলেমেয়েকে আজ স্কুলে পাঠাইনি।’

মুরইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে পোস্টারিং—সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। গ্রামের মাদকাসক্ত ব্যক্তি বা কিশোর অপরাধীরা টাকার জন্য এমন পোস্টার সাঁটাতে পারে। গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় দফাদারদের দিয়ে গ্রামে পাহারা বসানো হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আতঙ্ক ছড়াতে চাঁদা চেয়ে এমন পোস্টার সাঁটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে নিবিড় অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। শিগগির অপরাধী চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।