টিউশনি করে জিপিএ ৫ পেয়েছে সুমাইয়া

সুমাইয়া আক্তার
ছবি: প্রথম আলো

সংসারে অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেছে সুমাইয়া আক্তার। টিউশনি করে নিজের পড়াশোনা চালিয়েছে। আজ শুক্রবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ ৫ পেয়েছে সে।

সুমাইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুহাতা গ্রামের দিনমজুর মো. জীবন মিয়ার বড় মেয়ে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার ভোলাচং উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে সে। তার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি ছোট বোন আছে।

সুমাইয়া যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে, তখন কাজের সন্ধানে বাবা জীবন মিয়া মা ও ছোট বোনকে নিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে চলে যায়। সেখানে তাঁরা পাঁচ বছর থাকেন। এ সময় সুমাইয়া দাদি রাজিয়া খাতুনের সঙ্গে থাকত। বাবা-মায়ের আদরবঞ্চিত সুমাইয়ার শৈশব এভাবেই কাটে। করোনার পর বাবা-মা গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের সুহাতা গ্রামে চলে আসে। সুমাইয়া তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

বর্তমানে সুমাইয়ার বাবা জীবন মিয়া ইজিবাইক চালান। এতে সংসারের খরচ না মেটায় মা পারভীন আক্তার বাড়িতে কাঁথা সেলাই করতেন। কাজ ভালো দেখে গ্রামের মানুষ তাকে তিন-চারটি শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই করে দিতে বলতেন। বিনিময়ে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে পেতেন। কোনো উপায় না পেয়ে সুমাইয়ার মা পারভীন বাড়িতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে নকশিকাঁথা সেলাইও শুরু করেন তিনি।

সুমাইয়া বলে, সংসারের হাল ধরতে মা কাঁথা ও নকশিকাঁথা সেলাই করতেন। সাধারণ কাঁথা সেলাই করে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং নকশিকাঁথা থেকে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পেতেন। যখন মায়ের কাজের চাপ বাড়ত, সে–ও কাঁথা সেলাই করত। পাশাপাশি গ্রামের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির চার-পাঁচজন ছেলেমেয়েকে পড়াত। এভাবে সে পড়াশোনা করেছে।

সুমাইয়া বলে, কলেজশিক্ষক চাচা স্বপন মিয়া তাকে পড়াশোনায় উৎসাহ জুগিয়েছেন। চাচার পাঠাগারে নিয়মিত পড়াশোনা করেছে সে। চাচা তিনজন শিক্ষকের কাছে নিয়ে গেছেন। তাঁরা বিনা মূল্যে পড়িয়েছেন। সে বলে, ‘বাবা অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অটোরিকশা চালিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না। আগামী দিনের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরও পরিশ্রম করব। তবু পড়াশোনা করব।’

সুমাইয়ার চাচা কসবার বায়েক আলহাজ শাহ আলম কলেজের বাংলা প্রভাষক স্বপন মিয়া বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে কাঁথা সেলাই ও টিউশনি করে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে সুমাইয়া। আমি চাই, ওর পথচলা সহজ ও মসৃণ হোক। স্রষ্টার কাছে একটাই চাওয়া, মেয়েটা যেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।’