রাজশাহীতে বিদ্যালয় মাঠে কৃষক লীগের সম্মেলন, বিপাকে পরীক্ষার্থীরা
রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সম্মেলনের জন্য ভবানীগঞ্জে যে মাঠ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটির পাশেই তিনটি বিদ্যালয়। এর মধ্যে দুটি বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সম্মেলনের দিনও দুই বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। পরীক্ষার মধ্যেই বিদ্যালয়ের মাঠকে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা। যদিও একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, সম্মেলনের কারণে পরীক্ষার সূচি দুই ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওই মাঠের পশ্চিম দিকে ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং উত্তর দিকে ভবানীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ভবানীগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিনটি বিদ্যালয় যৌথভাবে মাঠটি ব্যবহার করে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার থেকে ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও ভবানীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সময়সূচি প্রকাশ করে।
এদিকে আগামী ৪ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা কৃষক লীগ ওই মাঠে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন আহ্বান করেছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রচারণা চলছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সমীর চন্দ্র। সম্মেলনে প্রধান বক্তা থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
সম্মেলন উপলক্ষে ইতিমধ্যে বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মঞ্চের ২০০ গজের মধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আজ মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, মাঠে সভামঞ্চ তৈরির কর্মযজ্ঞ চলছে। পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বার্ষিক পরীক্ষা ও যথারীতি পাঠদান চলছে।
ছয়জন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যালয়ের মাঠে মাইক বাজিয়ে সম্মেলন করলে সেখানে পরীক্ষার পরিবেশ থাকবে না। ওই দিন পরীক্ষা স্থগিত করার দাবি করেন তাঁরা।
মঞ্চ তৈরির দায়িত্বে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঞ্চের সামনে পাঁচ হাজার মানুষের বসার জন্য চেয়ার রাখা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্মেলনের বক্তব্য প্রচারের জন্য ১০ থেকে ১২টি মাইক বাজানো হবে। এ সময় ১৩ থেকে ১৪ জন পরীক্ষার্থীকে মাঠের দিকে আসতে দেখা গেল।
পরীক্ষার্থীরা বলে, বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ তৈরি দেখে তারা সম্মেলনের বিষয়টি জানতে পেরেছে। পরীক্ষা চলার সময়ে মাইক বাজানো ও লোকজনের সমাগমের কারণে তাদের পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছয়জন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যালয়ের মাঠে মাইক বাজিয়ে সম্মেলন করলে সেখানে পরীক্ষার পরিবেশ থাকবে না। ওই দিন পরীক্ষা স্থগিত করার দাবি করেন তাঁরা।
জানতে চাইলে ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা চলার সময় মাঠে সম্মেলন হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে, এটা ঠিক। তবে ওই দিন পরীক্ষা দুই ঘণ্টা এগিয়ে সকালে আটটায় শুরু হবে। বেলা ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। এ বিষয়ে সম্মেলন আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলা হবে। তবে এসব সিদ্ধান্ত এখনো পরীক্ষার্থীদের জানানো হয়নি।
সময়সূচি পরিবর্তন করা হলেও পরীক্ষার শেষ আধা ঘণ্টা সম্মেলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তরিকুল ইসলাম নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
সম্মেলনস্থলের পাশের আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবানীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, সম্মেলনের সময় পরীক্ষার্থীদের ব্যাপক সমস্যা হবে। এ জন্য তিনি পরীক্ষা স্থগিতের পক্ষে। তবে পাশের উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সম্মেলনের সভাপতি ও রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক তাজবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাগমারার সম্মেলনটি মূলত জনসভায় পরিণত করা হবে। প্রায় ১৫ হাজার লোকসমাগম হবে। ওই দিন নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হবে। তবে অতিথিদের ওপর সেটা নির্ভর করবে।
পরীক্ষার মধ্যে বিদ্যালয় মাঠে সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তাজবুল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষা শেষের পথে, হয়তো সমস্যা হবে না।’