সুনামগঞ্জে কৃষকের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা দুঃখজনক, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মন্তব্য
সুনামগঞ্জে গ্রামবাংলার কৃষি ও কৃষকের ঐতিহ্য তুলে ধরতে নির্মাণ করা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বক্তা। আজ রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তাঁরা এ মন্তব্য করেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সকালে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এতে প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সীমান্তে চোরাচালান, জেলার হাটবাজার, খেয়াঘাট, নদীতে চাঁদাবাজি প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে কৃষকের ভাস্কর্যটি ভাঙার প্রসঙ্গও ওঠে।
এ প্রসঙ্গে সভায় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। এটি (কৃষকের ভাস্কর্য) নিয়ে কারও কোনো আপত্তি, মতামত থাকলে আমরা সেখানে আরও সুন্দর কিছু করতে পারতাম।’ এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘শুধু কৃষকের ভাস্কর্য নয়, অন্য কোনো বিষয়েও যদি কারও কোনো মতভিন্নতা থাকে, তাহলে সেটি আমাদের জানাতে পারেন। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেটি নিয়ে আলোচনা করব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এভাবে ভাঙচুর করলে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক বার্তা যায়, আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে সবার সচেতন থাকা উচিত।’
সভায় অন্যদের মধ্যে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল হক, সুনামগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মল্লিক মইন উদ্দিন আহমদ, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নূরুর রব চৌধুরী, সুনামগঞ্জের সাবেক সিভিল সার্জন সৈয়দ মোনাওয়ার আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নূরুল মোমেন, দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক পত্রিকার সম্পাদক শেরগুল আহমদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান বক্তব্য দেন।
সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন পয়েন্টে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিল উপজেলা প্রশাসন। ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এটি উন্মোচন করা হয়। তিন রাস্তার মোড়ে একজন কৃষক হাতে কাস্তে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কৃষাণ চত্বর’। চলতি পথে মানুষ সেখানে বিশ্রাম নিতেন, সেই ভাস্কর্য দেখতেন। শুক্রবার রাতে একদল লোক ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, শহীদ সিরাজ লেকসহ হাওর এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেতে ভাস্কর্যটি চোখে পড়ত। এই কৃষাণ চত্বরের পর সামনে এগোলেই পলাশ বাজারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘হাওর বৃত্ত’, এরপর কারেন্টের বাজার মোড়ে হাওরের বিশাল বোয়াল মাছের আদলে নির্মিত একটি ভাস্কর্য, এই স্থানের নাম দেওয়া হয় ‘বোয়াল চত্বর’। উপজেলা প্রশাসন এসব নির্মাণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার রাতে একদল লোক কৃষাণ চত্বরে থাকা কৃষকের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন। ফেসবুকে ওই ভাস্কর্য ভাঙার একটি ভিডিও দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লোক হাতুড়ি, শাবল দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙছেন। এ সময় পেছন থেকে স্লোগান দিতে বলা হয়। এরপর ‘শেখ হাসিনার আস্তানা বাংলাদেশে হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা বাংলাদেশে হবে না’, ‘শাহজালালের তলোয়ার গর্জে ওঠুক আরেকবার’, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ প্রভৃতি স্লোগান দেন সেখানে থাকা লোকজন।