যশোরে সেতু প্রকল্পে পড়েছে ব্যক্তিগত জমি, ক্ষতিপূরণ মিলছে না
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইছামতী খালের ওপর নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ মিটার। পুরোনো সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। দৈর্ঘ্য প্রায় দ্বিগুণ করে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন সেতু। নতুন এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৬০ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। সেই সঙ্গে সেতুটির সংযোগ সড়কের প্রস্থ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন সেতুর এক পাশের বর্ধিতাংশ পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমিতে। নতুন সেতু নির্মাণ ও সড়ক সম্প্রসারণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়েই প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। জমি হারিয়ে ক্ষতিপূরণের আশায় ঘুরছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
অভয়নগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, যশোরের অভয়নগর উপজেলার ইছামতী এলাকায় ইছামতী খালের ওপর ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ দশমিক ৬৬ মিটার প্রস্থের একটি সেতু ছিল। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এলজিইডির গ্রামীণ সেতু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ভাঙ্গাগেট বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা নাউলী বাজার সড়কের ইছামতী খালের ওপর পুরোনো সেতুটির জায়গায় ৬০ দশমিক ০৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৫ দশমিক ১৮ মিটার প্রস্থের একটি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৮২ টাকা। মাদারীপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডার্স সেতুটি নির্মাণের কাজ করছে। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং চলতি বছরের ১৮ জুন তা শেষ হওয়ার কথা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কয়েকজন বলেন, পুরোনো সেতুটি খালের জায়গায় ছিল। নতুন যে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তার দক্ষিণ প্রান্তের জমিতে তাঁদের ভিটাবাড়ি ও দোকান আছে। সেতুর বর্ধিত অংশে তাঁদের প্রায় ৩২ শতাংশ জমি চলে গেছে। এতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতিপূরণের আশায় তাঁরা এলজিইডি কার্যালয়ে বারবার ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। আদৌ ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না, এ নিয়ে তাঁদের শঙ্কা আছে।
খানে আমার ছয়টি দোকান ছিল। দুটি দোকান ভেঙে সরিয়ে নিয়েছি। আরও চারটি ভেঙে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে আমাকে। আমার ক্ষতি হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ আমি পাইনি।
সেতুর পাশেই ক্ষতিগ্রস্ত মন্টু পদ বিশ্বাসের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘আমার মোট ১৩ শতাংশ জমির ওপর ভিটাবাড়ি। এর মধ্যে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ জমির ওপর নুতন সেতু চলে এসেছে। আমার জমির ওপর সেতুর গার্ডার ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আমার খুব ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণের জন্য এলজিইডির উপজেলা ও জেলা অফিসে বারবার যাচ্ছি। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।’
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বিপ্লব কুমার গাইন বলেন, ‘এখানে আমার ছয়টি দোকান ছিল। দুটি দোকান ভেঙে সরিয়ে নিয়েছি। আরও চারটি ভেঙে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে আমাকে। আমার ক্ষতি হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ আমি পাইনি। ক্ষতিপূরণের নামে সেতুর কাজে বাধা দিলে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হবে বলে ঠিকাদারের লোকজন আমাকে হুমকি দিয়েছেন।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শাহিন বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারের দেওয়া সেতুর লেআউট অনুসারে আমরা কাজ করছি। এ পর্যন্ত সেতুর ৬০ ভাগের বেশি কাজ হয়েছে। যে কাজ বাকি আছে, তা করতে আর ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে।’ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। হুমকির বিষয়েও তিনি কিছু বলেননি।
ইছামতী সেতুর জন্য ৩২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের একটি প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাব অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম ইয়াফি বলেন, ‘নতুন সেতুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জমিমালিকদের ৩২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
এলজিইডি যশোর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী সানাউল হক বলেন, ইছামতী সেতুর জন্য ৩২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের একটি প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাব অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এই মুহূর্তে সেটি কী অবস্থায় আছে, তা তাঁর জানা নেই। বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান।