যশোরের সেই অদম্য তামান্নার সঙ্গে দেখা করলেন শিক্ষামন্ত্রী
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অদম্য মেধাবী তামান্না নূরার সঙ্গে দেখা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আজ বুধবার দুপুরে যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে তামান্নার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এ সময় তামান্নাকে পড়াশোনা নিয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাঁর পাশে আছেন বলে জানান মন্ত্রী।
জন্ম থেকেই দুই হাত ও একটি পা নেই তামান্নার। সব বাধা পেরিয়ে বাঁ পা দিয়ে লিখে তামান্না মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
উচ্চমাধ্যমিকে কৃতিত্ব অর্জনের পর চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি তামান্নাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে মুঠোফোনে কল করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তখন তামান্নার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী আজ যশোরে এলে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তার তামান্না নূরাকে কলেজ ক্যাম্পাসে আসতে বলেন। এরপর তামান্না ও তাঁর বাবা-মা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কলেজে আসেন। অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তামান্নার সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তামান্না নূরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের শিক্ষামন্ত্রী খুবই আন্তরিক। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো করার পর তিনি খুশি হয়ে আমাকে মুঠোফোনে কল করেছিলেন। তখন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। আজ আমার সঙ্গে দেখা করে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার বর্তমান পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজখবর নেন।’
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, তামান্না বাঁ পায়ে লিখে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ইচ্ছা আছে তাঁর।
তামান্নার সঙ্গে দেখা করার সময় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাবীব, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে তামান্না শিক্ষামন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটানোর আহ্বান মন্ত্রীর
এদিকে বিকেলে যশোরের সরকারি শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন মহাবিদ্যালয়ে সুধী সমাবেশে যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটাতে হবে। আগামী বছর নতুন পাঠ্যসূচির বই পুরোপুরি পাওয়া না গেলেও ২০২৪ সালে নতুন কারিকুলামে পাঠদান করা হবে।
যশোরের শিক্ষাব্যবস্থায় শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীনের অবদানের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা খাত এগিয়ে নিতে এই শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি। লাখো মানুষের ভালোবাসায় নিজেকে সিক্ত করেছেন।’
সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শহীদ সিরাজুদ্দীনের ছেলে সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাবীব, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম ও বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সিরাজুদ্দীন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান। সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে তিনটি দাবি তুলে ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ। দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।