বকেয়া বিল নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা, যুবলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে রেস্তোরাঁ ভাঙচুরের অভিযোগ

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে বরমী মিষ্টি ঘর অ্যান্ড হোটেলে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বিল নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে স্থানীয় যুবলীগ কর্মীরা একটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর ও রেস্তোরাঁর কর্মীদের মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় বরমী মিষ্টি ঘর অ্যান্ড হোটেলে এ ঘটনা ঘটে।

রেস্তোরাঁমালিক আবুল হাসেমের ভাই মো. সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীপুরের যুবলীগ পদপ্রার্থী আজিজুর রহমান ওরফে জন ও তাঁর ভাইয়ের লোকজন হোটেলে ভাঙচুর করেছেন। আজিজুর রহমান তাঁর লোকজন নিয়ে ছয় মাস ধরে ওই রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন খাওয়াদাওয়া করেন। খাওয়ার পর বেশির ভাগ সময় খাবারের বিল বাকি রেখে চলে যান তাঁরা। এ ছাড়া প্রায়ই ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী খাওয়ার পর আজিজুর রহমানের নামে বিল বাকি রাখার কথা বলেন। পরে টাকা চাইলে আজিজুর সেই টাকা পরিশোধ করেন না। এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর আবুল হাসেম বাকি দেওয়া বন্ধ করার জন্য রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলামকে নির্দেশনা দেন।

সোহাগের ভাষ্য, গতকাল রাত পৌনে দুইটার দিকে আজিজুর রহমানের অনুসারী পাঁচ যুবক রেস্তোরাঁয় এসে খাবার পার্সেল করতে বলেন। এ সময় টাকা চাইলে ওই পাঁচ যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে রেস্তোরাঁর কর্মচারীকে মারধর করে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর আজিজুর রহমান ১০ থেকে ১৫ যুবককে নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় আসেন। আজিজুর রেস্তোরাঁর বাইরে গাড়িতে বসে ছিলেন। তখন আজিজুরের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে ভেতর ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ সময় রেস্তোরাঁর কর্মচারী মফিজ মিয়া ও কারিগর মো. শফিকুল ইসলামকে মারধর করেন তাঁরা।

পরে বিষয়টি শ্রীপুর থানা-পুলিশকে জানানো হয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে আহত মফিজ মিয়া ও শফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে আজিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা আমাদের যুবলীগের ছেলেপেলে। তাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া নিয়ে হোটেলের লোকজনের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি, মারামারি হয়েছে। পরে ওই মার্কেটের মালিক মো. রিপন আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। আমি সেখানে গিয়ে উত্তেজিত অবস্থায় ছেলেপেলেদের নিয়ে চলে আসি। মার্কেটের মালিক বিষয়টি মীমাংসা করতে বলেছিলেন। কিন্তু উত্তেজিত পরিস্থিতিতে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হয়নি।’

ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজুর বলেন, ‘আমি সেখানে অনেক পরে গিয়েছি। তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। আমি সেখানে ভাঙচুর বা মারামারিতে অংশ নিইনি। সেখান থেকে চলে আসার সময় হোটেলের লোকজন আমার পাঞ্জাবি টেনে ছিঁড়ে ফেলে।’

শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আজিজুর রহমান যুবলীগের কোনো পদে নেই। তবে আজিজুর পদপ্রত্যাশী বলে শুনেছেন তিনি। তবে এভাবে অন্যায় করতে থাকলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কাউকেই পদ দেবে না। এ ধরনের কাজ নিন্দনীয়।

শ্রীপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি, সেখানে কিছু ছেলেপেলে চা-নাশতা খেতে এসে হোটেলের লোকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা করেছেন। একপর্যায়ে হোটেলের একজনকে চড় মেরেছেন। তবে আমরা সেখানে গিয়ে ওই ছেলেপেলেদের পাইনি।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি।