ঈদের পর চট্টগ্রামের বাজারে দাম কমল যেসব পণ্যের

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জফাইল ছবি

ঈদের পর এখনো পুরোপুরি জমে ওঠেনি চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার। খুচরায় বেচাকেনা তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বাজারে চিকন চালের দাম কিছুটা বাড়তি। অন্যদিকে কমেছে ডাল, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। নতুন করে দর নির্ধারণ না হওয়ায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাজারে বাড়তির দিকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ বাজার নগরের খাতুনগঞ্জ। এ বাজারে গত মার্চ মাসের তুলনায় বর্তমানে প্রতি মণে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে খোলা সয়াবিনের দাম। সেই হিসাবে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে পাঁচ টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৭৮ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮৪৫ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ চিত্র আজ রোববারের।

ব্যবসায়ীরা জানান, পবিত্র রমজান মাসে মানুষকে সুরক্ষা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে আমদানি পর্যায়ে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে এ অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠক হলেও এখনো নতুন দরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই বাজারে সয়াবিনের দাম কিছুটা বাড়তি। যদি এ সুবিধা বাড়ানো হয়, তাহলে দাম কমে যাবে।

জানা গেছে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা করে বাড়াতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেয়। বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ নিয়ে অন্তত দুই দফা বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি সরকার।

বাড়তি চার চালের দাম

বাজারে বিক্রি হওয়া নাজিরশাইল, জিরাশাইল, কাটারি ও মিনিকেট চালের দাম বাড়তি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে নাজিরশাইল ও জিরাশাল প্রতি কেজি ৯০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কাটারি ও মিনিকেটও ৮৫ টাকার আশপাশে।

মিলমালিকেরা ধান মজুত করে দাম বাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, মোটা চালের দাম বাজারে কম আছে। স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণাসহ অন্যান্য চাল কেজিপ্রতি ৪৭ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে। ধান মজুতের কারণে চার ধরনের চালের দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে নগরের পাইকারি বাজারগুলোতে মসুর ও মটর ডালের দাম কমেছে। এ সপ্তাহে প্রতি কেজি মসুর ডাল ৯৩ টাকা ও মটর ডাল ৫১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৭ টাকা ও মটর ডাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা দরে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, মসুর ও মটরের দাম কমেছে। বাজার কিছুদিন হলো খুলেছে। তবে এখনো সেভাবে বিক্রি নেই। বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম কমতির দিকে। শুধু তেলের দাম কিছুটা বাড়তি।

পেঁয়াজ-রসুনের দামে স্বস্তি

ডালের পাশাপাশি পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও কমেছে। বাজারে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। ভারতীয় কিছু পেঁয়াজও খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।

পেঁয়াজের পাশাপাশি বাজারে রসুন ও আদার দামও কমেছে। দেশি রসুন ও আদার পাশাপাশি বাজারে আমদানি করা রসুন ও আদার দামও কমেছে। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে। অন্যদিকে প্রতি কেজি আদা ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে গরমের কারণে বিক্রি কম।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতা আহসান খালেদ বলেন, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম কমতির দিকে আছে এখন। তবে বাজার চাঙা নেই। খুচরা বেচাকেনা চলছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বাজার চাঙা হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

বাজারে বর্তমানে অবস্থা নিয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই সয়াবিন তেলের বাজার কিছুটা বাড়তির দিকে। তবে বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে।