বিক্রেতার কাছ থেকে মাছরাঙা কিনে বন বিভাগকে দিলেন এক অটোরিকশাচালক
বিক্রির জন্য রাস্তার পাশে চারটি মাছরাঙা পাখির ছানা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক ব্যক্তি। অনেকে পাখির ছানাগুলো কেনার জন্য দরদাম করছিলেন। রাস্তার পাশে এমন দৃশ্য দেখে বিক্রেতাকে পাখিগুলো বিক্রি করতে নিষেধ করেন রনি (২৮) নামের এক অটোরিকশাচালক।
কিন্তু রনির কথায় পাত্তা না দিয়ে পাখি বিক্রেতা তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মাছরাঙা পাখির ফুটফুটে ছানাগুলো দেখে বেশ মায়া হয় রনির। অবশেষে উপায় না পেয়ে পকেটে থাকা ৪০০ টাকা দিয়ে তিনি পাখিগুলো কিনে নেন। পরে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই রনি পাখির ছানাগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। আজ শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নন্দরানী সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
অটোরিকশাচালক রনি মৌলভীবাজারের বাসিন্দা। বন্য প্রাণী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন ‘স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফের (এসইডব্লিউ) সমন্বয়ক সোহেল শ্যাম বলেন, ‘এক অটোরিকশাচালক আমাদের ফোন করে বলেন, তিনি চারটি পাখির বাচ্চা পেয়েছেন। উনার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, এগুলো মাছরাঙা পাখির বাচ্চা। পরে উনাকে বলি বাচ্চাগুলো নিয়ে বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসে আসার জন্য। পরে বন বিভাগ আমাদের কাছে পাখির বাচ্চাগুলো দেখাশোনার জন্য রেখেছে।’
বন বিভাগ ও এসইডব্লিউ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া চারটি ছানা একদম ছোট। বয়স আনুমানিক ২০ দিন। যে ব্যক্তি পাখির ছানা বিক্রি করছিলেন তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি।
অটোরিকশাচালক রনির বরাত দিয়ে সোহেল শ্যাম বলেন, রনি যাত্রী নিয়ে শ্রীমঙ্গলের নন্দরানী চা-বাগানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে নন্দরানী চা-বাগানের রাস্তার পাশে মাছরাঙার ছানা বেচাকেনার দৃশ্য তাঁর চোখে পড়ে। পাখিগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও পাখি বিক্রেতা রাজি হননি। পরে রনি নিজের টাকা দিয়ে ছানাগুলো কেনেন।
রনির মহানুভবতার প্রশংসা করে সোহেল শ্যাম বলেন, ‘আমি ওই অটোরিকশাচালককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি নিজের পয়সা খরচ করে পাখি কিনে সেটা অবমুক্ত করতে এসেছেন, এভাবে তো সবাই করে না।’
উত্তরে রনি তাঁকে বলেছেন, ‘পাখিদেরও জীবন আছে। কোনো খারাপ লোকের কাছে বাচ্চাগুলো পড়লে হয় খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকত, না হয় মারা পড়ত। টাকাপয়সা আজকে আছে কালকে নাই। তাই আমি পকেটের ৪০০ টাকা দিয়ে চারটি বাচ্চা কিনে আনি।’
মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাছরাঙার ছানাগুলো অনেক ছোট। এখনো উড়তে পারে না। ছানাগুলো স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফের অস্থায়ী সেবাকেন্দ্রে আপাতত রাখা হয়েছে। সেখানে ছানাগুলো দেখাশোনা করা হচ্ছে। ছানাগুলো উড়তে শিখলে অবমুক্ত করে দেওয়া হবে।