মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার অনুসারীদের বিক্ষোভ, রেলপথ অবরোধ

কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার সমর্থকেরা রেলপথ অবরোধ করেছেন। বুধবার বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নাঙ্গলকোট বাজার এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে কুমিল্লা-৬ আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের একাংশ। তারা আসনটিতে দলের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদকে (ইয়াছিন) চায়। এদিকে কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার সমর্থকেরা রেলপথ অবরোধ করেছেন।

বুধবার বিকেলে নগরের ধর্মসাগরপাড়ে অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় থেকে নারীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ–মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে আসে। এরপর সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কামরুন নাহার নামের এক নারী বলেন, ‘আজ নারীরা বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে ইয়াছিন ভাইয়ের মনোনয়নবঞ্চনা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা অবিলম্বে কুমিল্লা সদর আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে ইয়াছিন ভাইকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

সদর আসন হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা-৬ আসনটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা এবং সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত। গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে কুমিল্লা-৬ আসনে মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর গত সোম ও গতকাল মঙ্গলবার আমিন-উর-রশিদের পক্ষের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ করেন।

কুমিল্লা-৬ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদকে (ইয়াছিন) দলীয় প্রার্থী ঘোষণাা দাবিতে নারীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ–মিছিল। বুধবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে কুমিল্লা সদরের বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, ২০১৮ সালে তিনি কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর কুমিল্লা-১০ আসনের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা-৬ (সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর উপজেলা ও সেনানিবাস এলাকা) আসনে যুক্ত করা হয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর থেকে কুমিল্লা-৬ আসনে কাজ করেছেন মনোনয়ন পাওয়া মনিরুল হক চৌধুরী। অন্যদিকে আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিন সর্বশেষ ২০১৮ সালে কুমিল্লা-৬ আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

নাঙ্গলকোটে রেলপথ অবরোধ

কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার সমর্থকেরা রেলপথ অবরোধ করেছেন। রেলপথ অবরোধের পাশাপাশি টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। বিকেল সোয়া চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নাঙ্গলকোট বাজার এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।নাঙ্গলকোট রেলস্টেশনমাস্টার জামাল হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর গোধূলি প্রায় ৫০ মিনিট হাসানপুর রেলস্টেশনে আটকা পড়ে অবরোধের কারণে। চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেন ১ ঘণ্টার বেশি আটকা পড়ে লাকসামে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নেতা-কর্মীরা রেলপথ থেকে সরে গেলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কুমিল্লা-১০ আসনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়াকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া।

বুধবার বিকেলে রেলপথ অবরোধ করে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার অনুসারী নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা আবদুল গফুর ভূঁইয়ার মনোনয়ন বাতিল করে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। রেলপথ অবরোধ শেষে তাঁরা উপজেলা সদরের প্রধান সড়কগুলোতে বিক্ষোভ–মিছিল করেন।

অবরোধ চলাকালে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার অনুসারী মনির হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া মাঠে ছিলেন। তিনি সব সময় নির্যাতিত নেতা–কর্মীদের পাশে ছিলেন। অথচ এবার তাঁকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আবদুল গফুর ভূঁইয়াকে। নেতা–কর্মীরা এই মনোনয়ন মানেন না।