আরসার প্রধান কমান্ডারসহ ৪৯ জনের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী, খালেদ
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা (স্কোয়াড্রন লিডার) রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার বান্দরবানের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ আসামিদের বিচার শুরু হলো। একই সঙ্গে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন।

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ডিজিএফআই কক্সবাজার কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত ১৫ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

অভিযোগপত্র গ্রহণের পর মামলার বাদী মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে। এখন বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত বছরের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ের বিশেষ একটি দল। এ সময় আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন ডিজিএফআইয়ের স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। গুলিবিদ্ধ হন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১৫ কক্সবাজারের সদস্য সোহেল বড়ুয়া। এ ছাড়া গুলিতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে সাজেদা বেগম (২০) নামের এক রোহিঙ্গা তরুণীও নিহত হন।

পুলিশ জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি আরসার কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী। তিনিসহ শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির (বর্তমানে আশ্রয়শিবিরটি নেই) চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা মাস্টার দিল মোহাম্মদ, সেক্রেটারি মৌলভি আরিফ, আরসা কমান্ডার ওস্তাদ খালেদ, মাওলানা মোস্তফা, আবদুর রহমান, আরসার সদস্য জুবায়ের, শাকের কাউসার, নোমান চৌধুরী, জিন্নাত উল্লাহ, লাল মোহাম্মদ, হাফিজ নুর, রহিম উল্লাহ, মৌলভি আজিজসহ কোনো আসামিকে এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কর্মকর্তা মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা সবাই মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা তুমব্রু সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আত্মগোপন করেন। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৩ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করলেও আতাউল্লাহসহ মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। সীমান্ত অতিক্রম করে রাখাইন রাজ্যে অভিযান পরিচালনা করা পুলিশের এখতিয়ারবহির্ভূত। তবে আসামিদের ধরতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায়, তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ওই আশ্রয়শিবিরে ৬২১ পরিবারের ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গার বসতি ছিল। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ১৫ জানুয়ারি শূন্যরেখার আরসার ঘাঁটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী দল। এ সময় পুরো আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়। পরবর্তী সময়ে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হলেও আরসার মূল সন্ত্রাসীসহ চিহ্নিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে আত্মগোপন করে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।