এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেয়ালের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অন্ত নেই। বারবার এসিল্যান্ড মহোদয়কে বলেও কাজ হয়নি। গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করছি।’
অনির উদ্দিনের নামজারি বাতিলের জন্য সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু তিন বছরের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। অনির উদ্দিনের মৃত্যর পর তাঁর ছেলেরা জমিটি দখলে রেখেছেন।বাবর আহমেদ, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ১১৪ নম্বর মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৭২৭ নম্বর দাগের ৩ দশমিক ৯০ শতক জমি ওই এলাকার মুরাদ আলীর কাছ থেকে কেনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে সময় ওই জমি নামজারি করা হয়নি। পরিকল্পনা ছিল, আরও জমি কিনে একবারে নামজারি করবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। জাতীয়করণের শর্ত পূরণ করতে কাগজকলমে বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতক জমি রয়েছে দেখানো হয়, যদিও বাস্তবে তখন পর্যন্ত মাত্র ১০ শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে কেনা হয়েছিল। এর মধ্যে মুরাদ আলীর কাছ থেকে কেনা জমিতে বিদ্যালয়ের শিশুরা খেলাধুলা করত, দৈনিক প্রাত্যহিক সমাবেশ হতো।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবর আহমেদ বলেন, নামজারি না করার সুযোগে ২০১১ সালে মুরাদ আলীর ছেলে মাসুদ গোপনে ওই জমি স্থানীয় প্রভাবশালী অনির উদ্দিনের কাছে বিক্রি করে দেন। অনির উদ্দিন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে ইটের দেয়াল তোলেন। ওই বছরের ১ অক্টোবর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনির উদ্দিনের নামজারি বাতিলের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু তিন বছরের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। সম্প্রতি অনির উদ্দিন বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর ছেলেরা জমিটি দখলে রেখেছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, মাঠে দেয়াল তোলার কারণে তাঁরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। লিখিত অভিযোগ দিয়ে বারবার প্রশাসনে ঘোরাঘুরি করেও কোনো ফল হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের শিশুদের স্বার্থে দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা করছেন তিনি।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয় একমাত্র ভবনের সিঁড়ি ঘেঁষেই পতাকা স্ট্যান্ড, তার গা ঘেঁষেই ইটের দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার দোলনাটি দেয়ালের বাইরে পড়েছে। সেটি এখন তালা দিয়ে আটকানো রয়েছে। দেয়ালের ভেতরে প্রায় ৫ হাত প্রস্থের সরু ফাঁকা স্থানে ফুটবল খেলছে শিক্ষার্থীরা।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাসেল হোসেন বলে, খেলার মাঠ ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। তারা খেলাধুলা ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। অনেক সময় দেয়ালে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে।
একই শ্রেণির ছাত্রী মোছা. কথা খাতুন বলে, ছোট্ট বাসার মতো তাদের স্কুল। সেখানে খেলাধুলা, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় না। দেয়াল ভেঙে ফেললে তাদের জন্য খুব ভালো হয়।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আফরোজা খাতুন বলে, বিদ্যালয়ের দোলনাটি অনেক দিন তালা লাগানো রয়েছে। তারা দোলনায় চরতে পারছে না। ছোটাছুটি করতে গিয়ে দেয়ালে লেগে অনেকের কেটেকুটে যায়। সে খেলার মাঠের এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চায়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪২ জন। অথচ ২০২১ সালে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ১৬২ জন, ২০২০ সালে ছিল ১৭১ জন ও ২০১৯ সালে ছিল ১৯১ জন। বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় প্রতিবছরে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
জানতে চাইলে প্রয়াত অনির উদ্দিনের ছেলে মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবা কাগজপত্র দেখে টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন। কাগজ যাঁর জমি তাঁর। বিষয়টি নিয়ে এসি ল্যান্ড অফিসে শুনানি চলছে। যা রায় হবে, তা তিনি মেনে নেবেন।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, সমস্যাটি ২০১৯ সালের। তিনি সম্প্রতি যোগদান করেছেন। বিষয়টি খুব দ্রুত সমাধান করা হবে।