নরসিংদীতে ট্রেনের ইঞ্জিনের হুকে আটকে দেড় কিলোমিটার, তরুণের ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার

আবু কালাম
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীতে ট্রেনের ইঞ্জিনের হুকে আটকে দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর এক তরুণের ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে পলাশের জিনারদী রেলস্টেশনসংলগ্ন রেললাইন থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনের হুকে আটকে থাকা অবস্থায় দেড় কিলোমিটার যাওয়া পর কাটা পড়েন তিনি। দুর্ঘটনার সময় ওই তরুণ রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন।

নিহত তরুণের নাম আবু কালাম (২০)। তিনি নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দী ইউনিয়নের উত্তর শীলমান্দী গ্রামের দড়িপাড়া এলাকার শহিদ মিয়ার একমাত্র ছেলে। আবু কালাম মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে দাবি করছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

নিহত আবু কালামের বাবা শহিদ মিয়ার ভাষ্য, দেড় বছর ধরে আবু কালাম মানসিক ভারসাম্যহীন। একমাত্র ছেলেকে সুস্থ করার জন্য ভিটেবাড়িও বিক্রি করেছেন তিনি। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থও হয়ে উঠছিলেন। তবে সম্প্রতি আবার অসুস্থতা বেড়ে যায়। গতকাল বিকেলে স্থানীয় মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে রেললাইনে যাওয়ার পরই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনার সময় আবু কালাম রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা চট্টলা এক্সপ্রেসটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকবার হুইসেল বাজালেও তিনি সরেননি। পরে ট্রেনের ইঞ্জিনের হুকে আটকে যান তিনি। এভাবে প্রায় দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর জিনারদী রেলগেইট ও রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে কাটা পড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর শরীর।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নির্জন ওই রেললাইনে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পান স্টেশনটির মাস্টার।

পরে নরসিংদী রেলওয়ে ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর মাথা গলা ও হাত-পা ছিন্নবিচ্ছিন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলেই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর নিহত আবু কালামের পরিচয় শনাক্তের জন্য স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে চেষ্টা চালান তাঁরা। পরে রাত ৯টার দিকে নিহত ব্যক্তির বাবা শহিদ মিয়া ঘটনাস্থলে এসে পরনের লুঙ্গি দেখে লাশ শনাক্ত করেন।

জিনারদী রেলগেটের গেটম্যান আলী হোসেন বলেন, ‘চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি যখন আমাদের রেলগেট অতিক্রম করছিল, তখন আমি এর ইঞ্জিনের হুকে একজনকে আটকে থাকতে দেখি। স্টেশনে যাত্রাবিরতি না থাকায় দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল ট্রেনটি। পরে জানতে পারি স্টেশন অতিক্রম করার আগেই ওই ব্যক্তির ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ রেললাইনে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।’

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক ইকবাল হোসেন জানান, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ব্যক্তির মুখমণ্ডল দেখে তাঁর বাবা চিনতে পারছিলেন না। তাঁকে চিনতে হয়েছে পরনের লুঙ্গি দেখে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।