স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকে পুলিশ ধরবে না—এমন কথা বলে সমন্বয়ক পরিচয়ে টাকা নেন যুবক
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকে পুলিশ ধরবে না—এমন কথা বলে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে টাকা নিয়েছেন এক যুবক। যুবকের টাকা নেওয়ার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, টাকা নেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
টাকা নেওয়া অভিযুক্ত যুবকের নাম ওবায়দুল হক। তিনি উপজেলার সখল্যা গ্রামে বাসিন্দা। আর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার নাম শফিউল আলম। তিনি উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলীর ছেলে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, খাটের পাশে সোফায় পাঞ্জাবি-টুপি পরে বসা যুবক ওবায়দুল হক। শওকত আলীর উদ্দেশে শফিউল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘৫ হাজার টাকা দিলে ওবায়দুল বলছে, ওসি সাহেব আমারে ধরত না। হে ওসি সাহেবের লগে কথা কইছে। ভাইটকান্দি ইউনিয়নের আনোয়ার দারোগাও ধরত না।’ টাকা নেওয়ার পর যে পুলিশ আসবে না, বিষয়টি বুঝে টাকা নেওয়ার জন্য বলা হয় ওবায়দুলকে।
এ সময় ওবায়দুলকে বলতে শোনা যায়, ‘ইউনূস সরকার যত দিন আছে, আর আমি যত দিন বাঁইচ্চা আছি, এইডা আমি গ্যারান্টি দিলাম। আমি যদি তার (শফিউল) বিপক্ষেই থাকতাম, তাহলে ফোন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। সামনে ১০ রোজার পরে ওসি সাহেবরে দাওয়াত দিছি।’ তখন বারবার শফিউলের মাকে বলতে শোনা যায়, ‘পরে কোনো সমস্যা হইত না তো?’ তখন ওবায়দুল বলতে থাকেন, ‘আমি তো আছি, এককথা কতবার বলতাম।’
কথার একপর্যায়ে বিভিন্ন বিটে পুলিশের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নাম বলতে থাকেন ওবায়দুল হক। এরপর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলী ১ হাজার টাকার ৫টি নোট এনে ওবাদুলের হাতে তুলে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শওকত আলী বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ পর ঘরে এসে বসেছি। এর মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী ওবায়দুল হক আমার বাড়িতে আসে। ওবায়দুল নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দেয় এলাকায়। আমার ছেলেকে পুলিশ ধরবে না, ইউনূস সরকারের আমলে কোনো মামলা হবে না, এসব বলে পাঁচ হাজার টাকা নেয়। এটি ভিডিও করে রাখা হয়েছে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সে (ওবায়দুল) আমার কাছে ক্ষমা চাইতেছে।’
ওবায়দুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাদি বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। চাঁদাবাজি-দালালি এই টাইপের মনে হয়েছে। পুলিশের কথা বলে টাকা নেওয়া ব্যক্তিকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ময়মনসিংহে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন বলে এলাকায় প্রচার চালান ওবায়দুল হক। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহের সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘টাকা নেওয়ার যে ভিডিওটি ছড়িয়েছে, তা আমাদের নজরে এসেছে। এখন আর সমন্বয়ক ফরমেট নেই। যে ব্যক্তি টাকা নিচ্ছে, সে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে যারা এ ধরনের অপতৎরতা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’