অবরোধের মধ্যে একটি বাস আসবে, এ আশায় ১৬ কিলোমিটার হাঁটলেন ৫ শ্রমিক

রংপুরে বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিনে যানবাহন না পেয়ে হেঁটে চলছেন পাঁচ শ্রমিক। তাঁরা রংপুর থেকে যাচ্ছেন নেত্রকোনার দিকে। ছবিটি রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ধর্মদাস এলাকায় তোলাছবি: মঈনুল ইসলাম

বিএনপির ডাকা অবরোধে দূরপাল্লার বাস চলাচল না করায় দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। লেগুনা, অটোরিকশার মতো ছোট ছোট পরিবহন পাওয়া গেলেও সেগুলোতে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষদের অনেকে সাত-পাঁচ বিবেচনা করে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন। আজ বুধবার সকাল নয়টার দিকে এমন একটি চিত্র দেখা গেছে রংপুর শহরের ধর্মদাস এলাকায়। মহাসড়ক ধরে নেত্রকোনার উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছিলেন পাঁচ নির্মাণশ্রমিক।

এই পাঁচ নির্মাণশ্রমিক হলেন মোহাম্মদ আলী, লোমান মিয়া, এনামুল হক, সাখাওয়াত হোসেন ও মোস্তাকিম মিয়া। তাঁদের সবার বাড়ি নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ এলাকায়। তাঁরা রংপুরের পাগলাপীর এলাকায় একটি ভবন নির্মাণে রডমিস্ত্রির কাজ করতে এসেছিলেন। কাজ শেষ হয়েছে। এবার বাড়িতে ফেরার পালা। কিন্তু তাঁরা জানতেন না, আবারও অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।

পাঁচ শ্রমিকের সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয় রংপুর শহরের ধর্মদাস এলাকায়। তাঁরা বলেন, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে পাগলাপীর থেকে মহাসড়কের পাশ ধরে প্রায় ১৬ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে এসেছেন তাঁরা। সকাল সাতটার দিকে রওনা দিয়ে বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পর যখন জানতে পারেন কোনো বাস চলছে না, তখন তাঁরা মহাসড়ক ধরে এগোতে থাকেন। তাঁদের আশা, একটা না একটা বাস তাঁরা পেয়েই যাবেন। হাঁটার মধ্যে তাঁরা কিছু জায়গায় বিরতি দিয়ে জিরিয়ে নিয়েছেন।

এই শ্রমিকেরা রংপুরের পাগলাপীর এলাকায় একটি ভবন নির্মাণে রডমিস্ত্রির কাজ করতে এসেছিলেন। কাজ শেষ হয়েছে। এবার বাড়িতে ফেরার পালা। কিন্তু তাঁরা জানতেন না, আবারও অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

শ্রমিকদের একজন মোহাম্মদ আলী বলেন, রংপুর শহরের মডার্ন মোড়ে এসে কিছু লেগুনা পাওয়া গেলেও গাইবান্ধার পলাশবাড়ি পর্যন্ত চালকেরা ভাড়া হাঁকছেন ২৫০ টাকা। এরপর সেখান থেকে বগুড়ায় যেতে আরও ৩০০-৩৫০ টাকা। এভাবে ছোট পরিবহনে নেত্রকোনায় যেতে দেড় হাজার টাকারও বেশি ভাড়া পড়বে। অথচ বাসে এই পথ ৩০০-৩৫০ টাকার মধ্যে যাওয়া যায়। এত বেশি ভাড়া দিয়ে কোনোভাবেই যাওয়া সম্ভব নয় বলে মহাসড়কের পাশ দিয়ে তাঁরা হেঁটে চলেছেন। চলতে চলতে যদি কোনো বাস মিলে যায়!

এদিকে বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিনে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত রংপুরের মহাসড়কে কোনো দূরপাল্লার বাস ও আন্তজেলা বাস চলতে দেখা যায়নি। তবে শহর ও শহরের বাইরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলছিল।

রংপুরে বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিনে মহাসড়কে যান চলাচল কম। আজ সকালে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরাগীগঞ্জ এলাকায়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

মহাসড়কে বাস চলাচল না করার বিষয়ে মালিক-শ্রমিকদের ভাষ্য, বাসের যাত্রী না থাকায় বাস বের করেও কোনো লাভ হয়নি। বরং শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়েছে পকেট থেকে। এভাবে বাস মহাসড়কে চলাচল করলেও যাত্রীরা বাসে উঠতে চান না। যাত্রীরা অটোরিকশা কিংবা লেগুনায় চলাচল করছেন বলে তাঁদের দাবি।