কক্সবাজারে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে এনজিওগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অসহায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। যেসব এনজিও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ করে, তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
গতকাল শনিবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের একটি হোটেলে এনজিও খাতে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক সচেতনতামূলক এক কর্মশালার উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা তুলে ধরেন মো. মাসুদ বিশ্বাস। অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও বিএফআইইউ যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে ২০টি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামল। দিনব্যাপী এই কর্মশালায় এনজিও সেক্টরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক ছয়টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন, এনজিওর করণীয়, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর ভূমিকা ইত্যাদি।
কক্সবাজার অঞ্চলের সীমান্ত ও অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনায় মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে জানিয়ে বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার অঞ্চল দেশের গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) সীমান্ত এলাকা এবং মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলের সঙ্গে মিয়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। তাই কোনো অপশক্তি যাতে এ অঞ্চলে কর্মরত এনজিওগুলোর কর্মী বাহিনী ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়নের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে যেসব বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে অনুদান, ত্রাণ ও সহায়তা পাঠানো হচ্ছে, তাদের পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা গ্রহণের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামল বলেন, কোনো এনজিও যেন মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত না হতে পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। কর্মশালা থেকে অর্জিত জ্ঞান মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধের কাঠামো উন্নয়নে কাজে লাগতে হবে।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সাল থেকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সাল থেকে এনজিওগুলোকে কার্যক্রমের প্রতিবেদন প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় জানিয়ে বিএফআইইউর প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, এনজিও খাতে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধে এই কর্মশালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সেক্টরকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়নমুক্ত রাখতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫), সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জারি করা ঘোষণা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।