নৌকা নেই, তবু বিপদে লাঙ্গল

ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে ছাড় দিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহজাহান আলমকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন। তিনি এখানে শক্তিশালী প্রার্থী। তাঁর পাশে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী।

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দলীয় প্রতীক লাঙ্গল আর মঈন উদ্দিন কলার ছড়ি প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন। রেজাউলের প্রতিপক্ষ তাঁর শ্বশুর জাপার কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটির (রওশন) সহসভাপতি টানা দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা মাঠে আছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে।

এ ছাড়া এখানে ভোটের মাঠে রয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার-দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ধানের শীষ প্রতীকের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী (মিনার), বিএনপির দলছুট সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হাসান (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ (ফুলের মালা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. রাজ্জাক হোসেন (আম)। ভোটের মাঠে তাঁদের তেমন কোনো অবস্থান নেই বলেই চলে।

এখানে সাত প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় আছেন মঈন উদ্দিন, জিয়াউল হক মৃধা ও রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তাঁদের মধ্যে মঈন উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের অন্তর্ভুক্ত আশুগঞ্জের তালশহর গ্রামের, জিয়াউল হক সরাইলের কালীকচ্ছ গ্রামের আর রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের অন্তর্ভুক্ত সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা।

এ আসনে মাঠপর্যায়ে মঈন উদ্দিন ও জিয়াউল হক মৃধার বেশ পরিচিতি রয়েছে। রেজাউলের তেমন পরিচিতি নেই। রেজাউল ২০০১ সালের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে জামানত হারান।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে তাঁদের দলীয় প্রার্থী না দিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেন। নির্বাচনে রেজাউল ইসলামকে দেওয়া হয়েছিল লাঙ্গল প্রতীক। তবে সুবিধা করতে না পেরে নির্বাচনের দুই দিন আগে রেজাউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ওই নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় প্রতীক নিয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। এ আসনে এর আগে-পরে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী এত ভোট পাননি। ওই নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় হন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় উপনির্বাচন। ওই নির্বাচনেও প্রথমে জাপার প্রার্থী হয়েছিলেন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। পরে স্থানীয় জাপার নেতা-কর্মীদের বাধায় রেজাউলের পরিবর্তে জাপার প্রার্থী করা হয় জাপার যুগ্ম মহসচিব আবদুল হামিদকে।

গত ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন মঈন উদ্দিন। আলোচনায় তিনি ছিলেন শীর্ষে। পরে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তিনি। সরে দাঁড়ান জিয়াউল হক মৃধাও। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে সাত্তার ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা বাদে মঈন উদ্দিনের বিশাল কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা যেকোনো মূল্যে মঈন উদ্দিনের পক্ষে থাকতে প্রস্তুত রয়েছেন।

মঈন উদ্দিনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন জেলা পরিষদের সদস্য ও সরাইল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী পায়েল হোসেন মৃধা, সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আমিন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক, হোসেন মিয়া, বাবুল হোসেন, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনিছুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিফাত সিকদারসহ শত শত নেতা-কর্মী।

শরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করতে আমাদের দলীয় কোনো বাধা নেই। তাই আমরা আমাদের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আছি।’

সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ আসন থেকে আমাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কী করব, তা দুই-এক দিনের মধ্যে পুরোপুরি পরিষ্কার করা হবে।’

আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই। কার নির্বাচন করতে হবে, এমন কোনো নির্দেশনাও নেই। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন আওয়ামী লীগেরই লোক। তাই আমরা তাঁর পক্ষেই আছি।’

আনিছুর রহমান ও আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নির্বাচনে আমরা ইচ্ছেমতো যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারব। এতে দলীয় কোনো বাধা নেই। এখানে ৮০ শতাংশ দলীয় নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের পক্ষে আছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে ও আমরা বিজয়ী হব।’

জাপার যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজাউলের এখানে তেমন পরিচিতি নেই। এ ছাড়া এখানে তাঁর শ্বশুরও বেশ শক্তিশালী প্রার্থী। এখানে রেজাউলকে নিয়ে ভালো কিছু করা কঠিন ব্যাপার।’