গাছ কেটে মিলনায়তনের ‘সৌন্দর্য বৃদ্ধি’ করছে হবিগঞ্জ পৌরসভা

হবিগঞ্জের শাহ এম এস কিবরিয়া মিলনায়তনের দেয়ালঘেঁষা এসব গাছ আর থাকবে না। কাটার জন্য দরপত্র চূড়ান্ত করেছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জের শাহ এ এম এস কিবরিয়া পৌর মিলনায়তনের চারপাশে আকাশমণি, শিলকড়ই, মেহগনি, জলপাইসহ নানা জাতের গাছ আছে। যার ছায়া গিয়ে পড়ে পাশের হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে (নিউফিল্ড এ)। সকাল-বিকেল সেখানে খেলাধুলা করে কিশোর-তরুণেরা। সবুজ গাছগাছালি ঘিরে পানকৌড়ি, শালিক, কোকিল, চড়ুইসহ নানা প্রজাতির পাখির মিলনমেলা বসে।

তবে এই পরিবেশ আর রাখছে না হবিগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ‘সৌন্দর্যবর্ধনের’ জন্য মিলনায়তনের চারপাশের সীমানা ঘেঁষে বেড়ে ওঠা গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে গাছ কাটার জন্য দরপত্রও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

গাছ কাটার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। কলেজ কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা এনামুল হাসান বলেন, শাহ এ এম এস কিবরিয়া পৌর মিলনায়তনের এসব গাছ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, জুডিশিয়াল আদালত এলাকা ও দ্য রোজেস স্কুলের আশপাশের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। কেন এসব গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হলো, এলাকাবাসীর কাছে তা পরিষ্কার নয়। চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পৌরসভার এমন সিদ্ধান্ত।

দু-এক দিনের মধ্যে ঠিকাদারকে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হবে। গতকাল হবিগঞ্জের শাহ এম এস কিবরিয়া মিলনায়তনের পেছনে
ছবি: প্রথম আলো

শহরের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের পশ্চিম পাশে অবস্থিত শাহ এ এম এস কিবরিয়া পৌর মিলনায়তন। এ মিলনায়তনের চারপাশের সীমানা ঘেঁষে শতাধিক আকাশমণি, শিলকড়ই, মেহগনি, গামারি, রেইনট্রিগাছ আছে। হবিগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ গাছের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এসব গাছের মধ্য থেকে ৭০টি গাছ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের সামনের আরও ৩৮টি গাছসহ মোট ১০৮টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করে হবিগঞ্জ পৌরসভা। ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকায় চূড়ান্ত করা হয় এ গাছ কাটার দরপত্র। এখন কার্যাদেশ পেলেই গাছ কাটা শুরু করবেন ঠিকাদার।

গাছ কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দিলীপ কুমার দত্ত। গতকাল রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে এসব গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হবে।

গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিবরিয়া পৌর মিলনায়তনের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে বেড়ে ওঠা এ গাছগুলো জঙ্গলে পরিণত করেছে। তাই এগুলো কেটে পরিষ্কার করে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। এর জন্য গাছগুলো কাটা হবে।’ তিনি আরও বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের সামনে ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ ড্রেন নির্মাণের কারণে ৩৮টি গাছ কাটা পড়বে। তিনি আশা করছেন, এতে পরিবেশ সৌন্দর্য হারাবে না।

না কেটে গাছগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গাছগুলো ঘিরে পরিবেশগত ভারসাম্য সৃষ্টি হয়েছে। কিবরিয়া মিলনায়তন ও পাশের নিউফিল্ড এলাকায় সুন্দর ছায়া তৈরি হয়। পাখির কলরব ও কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকে আশপাশ। গাছগুলো কাটা হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে।