টিউশনি করে নিজে পড়েছেন, তিন ভাইবোনকেও উচ্চশিক্ষিত করেছেন
দরিদ্র কৃষকের সন্তান। বাবা যা আয় করেন, তা দিয়ে চলা কঠিন। তাই আমিনুরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চাননি। কিন্তু আমিনুর বসে থাকেননি। রাজমিস্ত্রীর সহকারীর কাজ করে ভর্তি কোচিং করেন। ভর্তি হন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে তিনি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। শুধু তা–ই নয়, নিজের কাছে এনে দুই ভাইকে লেখাপড়া করিয়েছেন, বোনকে দিয়েছেন পড়াশোনার খরচ। এ খরচ জোগাড় করেছেন টিউশনি করে।
সেই আমিনুর আজ রোববার এসেছিলেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডিগ্রি গ্রহণ করতে, সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন দরিদ্র মা-বাবাকে। ছেলের এই সাফল্যে তাঁরা গর্বিত।
নীলফামারী সদর উপজেলার চাঁদের হাট বিশমুড়ি গ্রামে আমিনুরের বাড়ি। বাবা মো. আজগর আলী কৃষি কাজ করেন। নিজের কিছু জমি আর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে খুব কষ্টে চলতে হতো। চার সন্তানের খাবার জোটানোই কষ্ট হতো।
আমিনুর বলেন, ২০০৯ সালে চাঁদের হাট মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং ২০১১ সালে সোনাফুলী মুন্সিপাড়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। কিন্তু তাঁর বাবা তাঁকে আর পড়াতে চাননি। নিজের চেষ্টায় রাজশাহী গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করেন। কোচিংয়ের খরচ জোগাতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। ২০১৩ সালে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন। ছোট ভাইকে নিজের কাছে এনে স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করান। আরেক ভাই এইচএসসি পাস করার পর তাঁকেও নিজের কাছে মেসে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করান। ছোট বোনকেও পড়াশোনার খরচ দিতেন।
আমিনুর এখন গাজীপুরে একটি চায়নিজ কোম্পানিতে চাকরি করছেন। যে দুই ভাইকে নিজের কাছে রেখে ভর্তি কোচিং করিয়েছেন, তাঁদের একজন মোমিনুর রহমান পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ঢাকায় চাকরি করছেন। আরেক ছোট ভাই মোকছেদুল ইসলাম পড়ছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। একমাত্র বোন শেরিনা আক্তার নীলফামারী সরকারি কলেজে গণিতে চতুর্থ বর্ষে (সম্মান) পড়ছেন।
আজ আমিনুরের বাবা আজগরের সঙ্গে কথা হয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘আমিনুর নিজে কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। আবার তিন ভাইবোনকেও পড়িয়েছে। ওর কারণেই আমার সব সন্তান শিক্ষিত হয়েছে।’ আমিনুরের মা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমিনুরের জন্য আমরা গর্ব করি। সে লেখাপড়া করে বড় হয়েছে। তাই তার সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে আসছি।’
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগের কর্মী শাহরিয়ার সৈকত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমিনুর টিউশনি করে চলতেন। অনেক কষ্টে নিজে লেখাপড়া করেছেন ও ভাইবোনদের লেখাপড়া করিয়েছেন।