ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত

পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী ও সেবা খাতের লোকজন কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া বেলাভূমি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সাগরের প্রবল ঢেউয়ের ঝাপটায় উপড়ে পড়েছে। গত সোমবার সৈকত এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। সাগরের অব্যাহত ভাঙনের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সৈকতের বালু ধুয়ে যাওয়ায় সৈকত কোথাও নিচু, কোথাও উঁচু হয়ে গেছে। এমনকি কোথাও কোথাও ছোট-বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। সেসব গর্তে পানি জমে থাকায় পর্যটকদের চলাচলে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীসহ সেবা খাতের লোকজন কুয়াকাটা সৈকত ও এর বেলাভূমি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় ৭৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে পাউবো। প্রকল্প অনুমোদন হয়ে কবে নাগাদ ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, তা পাউবো নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি।

কুয়াকাটা ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে পছন্দের একটি স্থান। বিশেষ করে কুয়াকাটাসংলগ্ন ফাতরার চর বা টেংরাগিরি বনাঞ্চল, সমুদ্রের নিঃসীম জলরাশি, জেলেদের মাছ ধরার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে সবার ভালো লাগে। এসব কারণে কুয়াকাটায় ছুটে আসছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে সমুদ্রের অব্যাহত ভাঙন এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে আকর্ষণীয় স্থানটি দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিবসটি পালন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সৈকত এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতে যাওয়ার মূল সড়কের দুই পাশের সৈকত এলাকা ভেঙে এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে সৈকত লাগোয়া পর্যটন পার্ক, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তা ছাড়া সাগর থেকে ফুঁসে ওঠা প্রবল জোয়ারের কারণে সৈকতের পূর্ব পাশের বাগান, পূর্ব দিকের জাতীয় উদ্যান ও গঙ্গামতি সৈকত এলাকায় বন বিভাগ সৃজিত বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে পড়েছে। সৈকতে যাওয়ার মূল সড়কটির অন্তত ২৫ ফুট সাগরে গিলে খেয়েছে। এককথায় কুয়াকাটা সৈকতে দাঁড়ালে মনে হয়, এ যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ।

বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম জানান, সমুদ্রের প্রবল জোয়ারে সৈকত এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ গাছ উপড়ে পড়েছে। সর্বশেষ এ বছর বর্ষা মৌসুমে সমুদ্রের কয়েক দফা জোয়ারের কারণে এসব বাগানের বেশি ক্ষতি হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সাগরের প্রবল জোয়ারের কারণে ভাটার সময় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ওপরের স্তরের মিহি বালু গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাওয়ার কারণে সৈকতটি ক্রমেই ছোট ও সরু হয়ে যাচ্ছে। ১০ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সৈকতের দুরবস্থা দেখে এ সময় তিনি জরুরি মেরামতকাজ বর্ধিত করার জন্য নির্দেশ দেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ বলেন, ‘তিন বছর ধরে এমন পদ্ধতিতে সৈকতের ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, বর্ষার সময়ে এ কাজগুলো করা হয়। এতে কেবল অর্থের অপচয় হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’

রুম্মান ইমতিয়াজ এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, কুয়াকাটা সৈকতটি একসময় সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল। ২০১০ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকত বা পর্যটন এলাকা তুলনামূলক বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে। বছরে গড়ে ১৫০ মিটার করে ভাঙলে গত ১৩ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৯৫০ মিটার সৈকত এলাকা সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে সৈকতের কোথাও এখন ১ হাজার ৫৫০ মিটার, আবার কোথাও ১ হাজার মিটার এবং কোনো কোনো জায়গায় সৈকতের প্রশস্ততা ৫০০ মিটারে গিয়ে ঠেকেছে। যার কারণে সৈকতের বেলাভূমির কোনো কোনো অংশে এখন আর জোয়ারের সময় হাঁটার পথ (ওয়াকিং জোন) থাকে না।

কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন অলীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প নামে ৭৫৯ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলাম। প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে তা থেকে কিছু সংশোধন করার জন্য বলা হয়। সংশোধন করে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি আবার জমা দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদন করা হলে স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজ শুরু হবে।’ প্রকল্প অনুমোদিত হয়ে কবে নাগাদ ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এ কর্মকর্তা।