মৌলভীবাজারে সবুজ আমন ধানের মাঠ এখন সোনালি

গ্রামের মাঠের যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই এখন সোনালি ধানের আভা। মঙ্গলবার সকালে মৌলভীবাজারের মল্লিকসরাইয়ে
ছবি: প্রথম আলো

গ্রামের পথে মাঠের যেদিকেই তাকানো যায়, সেদিকেই এখন সোনালি রঙের আভা ফুটছে। সবুজ আমন ধান সোনালি হয়ে উঠছে। সকালে কুয়াশায় এই ধানের খেতে একধরনের রূপ, আবার দুপুরে ঝকঝকে হয়ে হাসছে। বিকেলে পড়ন্ত সূর্যের রঙে মন রাঙানো আলো মেখে অন্য রকম আরেক মাঠ। সবুজ-সোনালিতে মাখা এই ধানের মাঠকে ঘিরে ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছেন কিষান-কিষানি। কিছুদিনের মধ্যেই এই ধান ঘরে উঠবে।

এ রকমই এখন মৌলভীবাজার জেলার ধানের মাঠগুলো। মাঠ থেকে এখন চোখ ফেরানো যায় না। এবার আমন ফসলে কোনো বিপর্যয় ছিল না। সঠিক সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ফসলও ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে আগাম জাতের কিছু ধান কাটা হয়েছে। তবে সব ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। সেই আশাতেই দিন গুনছেন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় জানিয়েছে, এ বছর মৌলভীবাজারে ১ লাখ ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে।

সম্প্রতি একাধিক দিন মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধানের মাঠগুলো হালকা সবুজ হয়ে আছে। সোনালি রঙের আভা ফুটছে ধানের চূড়ায়। বেশির ভাগ খেতেই ধানে পাক ধরেছে। দূর থেকে মনে হয় সোনালি রঙের চাদর কেউ বিছিয়ে রেখেছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মল্লিকসরাই, পালপুর, মীরপুর, পাগুলিয়া, আখাইলকুড়া, খারগাঁও, জুমাপুর, জগৎপুর, পাড়াশিমইল, বানেশ্রী, রায়পুর, রসুলপুর, খৈশাউড়া, বিরাইমাবাদ, বড়কাপন, দিশালোক, বরমান; রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর, পাঁচগাঁও, রাজনগর, ফতেহপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ; বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ, শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ; কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর, মুন্সীবাজার, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে খেতভরা ধান চোখে পড়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠে ছড়িয়ে আছে আমন ফসল। অনেক কৃষক তাঁর বাড়ির কাছের খালি জায়গায় ধানমাড়াই, ধান সেদ্ধ ও ধান শুকানোর জন্য ধানের খোলা তৈরি করছেন। গ্রামীণ হাটবাজারগুলোতেও বাঁশের তৈরি কৃষিসরঞ্জাম উঠতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের মল্লিকসরাই এলাকায় সবজিখেতে কাজ করছিলেন আবদুল আহাদ (৩৫)। কিছু সময় পর মাঠ থেকে বেরিয়ে চাঁদনীঘাট-একাটুনা সড়কে উঠে এলে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আমন ফসলের কথা তুলতেই মৃদু হাসি দিয়ে জানালেন, তিনি এবার ২২ কিয়ার (বিঘা) জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। এই জমি তাঁর নিজের না; চুক্তি ভাগিতে চাষ করেছেন। প্রতি কিয়ার জমির জন্য মালিককে দিতে হবে তিন মণ করে ধান।

আবদুল আহাদ বলেন, এই জমি চাষ করতে হাল, চারা, সার, বীজ, শ্রমিকসহ তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে তিনি ব্রি ধান-১১ জাতের করেছেন ১৭ কিয়া এবং ৫ কিয়ায় করেছেন ব্রি ধান-৭৫ জাতের। ব্রি ধান-৭৫ আগাম জাতের ধান, এই ধান কেটে ফেলেছেন। তাঁর মতো যাঁরা আগাম জাতের চাষ করেছেন, তাঁরাও কেটে ফেলেছেন। বাকি ধান সম্পূর্ণ পাকতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।

রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগের মো. খায়রুল বলেন, ‘সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এবার ধান ভালো হয়েছে। পোকা কিছু আক্রমণ করলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।’

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, ‘এ বছর মৌলভীবাজারের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই আমন ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হলেও ধারাবাহিকতা থাকায় ধানে তেমন একটা রোগবালাই আসেনি। তবে সার, ডিজেল ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় ধান উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় অনেকটাই বেড়ে গেছে। তাই কৃষকের স্বার্থে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে সরকারিভাবে ধান কেনার পরিমাণ বাড়াতে হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ধাপে ধাপে বৃষ্টি হয়েছে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও তেমন একটা হয়নি। এতে রোপা আমনের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫১, ব্রি ধান-৫২ ও ব্রি ধান-৫৭ জাতের চাষ বেশি হয়েছে। ভালো ফসল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। আগাম জাতের ব্রি ধান-৮৭, ব্রি ধান-৭৫, বিনা-৭ কিছু কাটা হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কৃষকও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলায় খুবই ভালো ধান হয়েছে। ধান সম্পূর্ণ পাকতে আরও ১০-১৫ দিন লাগবে। তবে আগাম জাতের অনেক ধান কাটা হয়ে গেছে।