রূপগঞ্জে যুবলীগ কর্মীকে বাড়ি থেকে ডেকে কোপানোর পর হাসপাতালে মৃত্যু

নিহত দ্বীন ইসলাম ওরফে দিলীপ
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যুবলীগের এক কর্মীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাতে কুপিয়ে যখমের পর আজ রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত দ্বীন ইসলাম ওরফে দিলীপ (৩৬) রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকার প্রয়াত আলী হোসেনের ছেলে। তিনি মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন।

স্বজনদের দাবি, ওয়ার্ড যুবলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক ওরফে পাভেলের ছোট ভাই পিয়াল হক তাঁর লোকজন নিয়ে দ্বীন ইসলামকে খুন করেছেন। পিয়াল মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বরকত উল্লাহর ছেলে। ইমদাদুল হকের দাবি, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে খুন হয়েছেন দ্বীন ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বীন ইসলাম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর বন্ধু সবুজ আহমেদ একই ওয়ার্ডের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তাঁদের পছন্দ করতেন না ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল। তিনি তাঁর পছন্দের লোকজনকে কমিটির নেতৃত্বে আনতে চাচ্ছিলেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার ইমদাদুলের ছোট ভাই পিয়াল, তাঁর অনুসারী আবুল হোসেন ও আবুল হোসেনের ছেলে মো. বিপ্লব মুঠোফোনে দ্বীন ইসলাম ও সবুজ আহমেদকে বাড়ির পাশে ডেকে নেন। পরে তিনজন মিলে দ্বীন ইসলাম ও সবুজ আহমেদকে কুপিয়ে যখম করে। তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আজ রোববার সকালে দ্বীন ইসলামের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া দ্বীন ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহত সবুজ আহমেদ এখনো চিকিৎসাধীন।

দ্বীন মোহাম্মদ মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী কর্মী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি তাওলাত হোসেন। দ্বীন ইসলামের স্ত্রী রূপালি বেগম জানান, তাঁর স্বামী যুবলীগের রাজনীতির পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ ওরফে আলমাসের অনুসারী হিসেবে এলাকায় রাজনীতি করতেন। এর সত্যতা নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল বলেন, তাঁর অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করতেন দ্বীন ইসলাম। এ কারণে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক দ্বীন ইসলামকে পছন্দ করতেন না। এর জের ধরে হত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দড়িকান্দি এলাকার আবুল হোসেন ও তাঁর ছেলে বিপ্লব ফেনসিডিল বিক্রি করছিল। বিষয়টি দ্বীন ইসলাম ও সবুজ দেখে ফেলেন। বিষয়টি না জানানোর শর্তে দ্বীন ইসলাম আবুলের কাছ থেকে ১৫ বোতল ফেনসিডিল নেন। আরও পাঁচ বোতল ফেনসিডিলের জন্য আবুলকে চাপ দিতে থাকেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বীন ইসলাম ও সবুজ মিলে বাকি পাঁচ বোতল ফেনসিডিলের জন্য আবুলের বাড়িতে যান। শুনেছি সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে দ্বীন ইসলাম ও সবুজকে কুপিয়ে যখম করা হয়েছে।’

হত্যায় নিজের ও ভাইয়ের নাম আসা প্রসঙ্গে ইমদাদুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ আমাকে ডেকে নিয়ে দ্বীন ইসলাম ও সবুজ আহমেদের কমিটিতে স্বাক্ষর দিতে বলেন। আমি তখন জানাই, ওরা দুজন এলাকায় মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। তাঁদের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমন লোকজনকে আমি কমিটিতে নিতে পারব না। এ নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার বিরোধ চলছিল। এর মধ্যে খুনের ঘটনাটি ঘটলে চেয়ারম্যান নিহত ব্যক্তির পরিবারকে প্রভাবিত করে আমার ভাই ও আমাকে এ ঘটনায় যুক্ত করতে চাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে কথা বলতে আবুল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রোববার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বীন ইসলামের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা করছি।’