কলেজ ভবন নাকি রাজনৈতিক কার্যালয়

কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, তাই পুরো কলেজ ভবনটি ঢেকে ফেলা হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়েছবি: মাসুদ রানা

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একের পর এক ব্যানার আর ফেস্টুনে পুরো ভবন ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ভবনের পাশের মাঠ ও মূল ফটকেও নেতা-কর্মীদের ছবিসংবলিত বাহারি প্রচারণা। একনজরে কেউ দেখলে মনে করবেন এটা কোনো রাজনৈতিক কার্যালয়। আদতে এটি গাজীপুরের কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ভবন।

কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের একটি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কলেজ ভবনসহ আশপাশের এলাকা ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন রাজনৈতিক প্রচারণার কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

গতকাল রোববার কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ব্যানার ও ফেস্টুনে কলেজের মূল ফটক, মাঠ ও অ্যাকাডেমিক ভবন ছেয়ে গেছে। প্রধান ফটকে বড় করে তোরণও তৈরি করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন উপলক্ষে ১৫ অক্টোবর সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। বিভিন্নভাবে নেতা-কর্মীরা নিজেদের প্রচারণা করার চেষ্টা করছেন। বড় নেতাদের ও সম্মেলনে আসা অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তাঁরা ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, তাই কলেজের প্রধান ফটকসহ আশপাশে এবং পুরো কলেজ ভবনটি ঢেকে ফেলা হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে।

একটা বড় রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হবে। এ কারণে সবাই আগে থেকেই ব্যানার-পোস্টার লাগিয়েছেন। এটা তো আশালীন কিছু নয়, তাই অতটা সমস্যা হবে না।
আতাউল্লাহ মণ্ডল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

কলেজের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজ ভবনে এভাবে রাজনৈতিক ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো দৃষ্টিকটু লাগছে। পাশাপাশি কলেজের সৌন্দর্যহানিও ঘটছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, পূজার ছুটিসহ বেশ কয়েক দিন কলেজ বন্ধ থাকার পর আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কলেজে ক্লাস শুরু হবে। বন্ধ থাকার সুযোগে কলেজ ভবনসহ মাঠের চারদিকে ব্যানার-ফেস্টুন যেভাবে লাগানো হয়েছে, তাতে ক্লাসে প্রবেশ করাই কষ্টকর হয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে রাজনৈতিক পোস্টার লাগানো উচিত হয়নি। আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে ১৫ অক্টোবর। প্রয়োজনে নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানের এক দিন আগে এসব পোস্টার লাগাতে পারতেন।

কলেজের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যানার-পোস্টারের কারণে কলেজের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হবে। সম্মেলনের পর এসব ব্যানার-পোস্টার কারা পরিষ্কার করবে, সেটিও দেখার বিষয়।

কলেজের প্রধান ফটকেও রয়েছে রাজনৈতিক ব্যানার–ফেস্টুন
ছবি: মাসুদ রানা

কলেজ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে, তাতে আমাদের কী! আমাদের বাড়িঘর থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সব জায়গায় পোস্টার লাগিয়ে পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দেখে মনে হচ্ছে, এটা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। দ্রুত এসব ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা প্রয়োজন।’

কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। তারপরও কলেজের পক্ষ থেকে এলাকার নেতা-কর্মীদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁরা বলছেন, অনুষ্ঠান শেষে এসব খুলে পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা বড় রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হবে। এ কারণে সবাই আগে থেকেই ব্যানার-পোস্টার লাগিয়েছেন। এটা তো আশালীন কিছু নয়, তাই অতটা সমস্যা হবে না। কয়েকটা দিনই তো।’