পাটকল বন্ধের কারণে দুই ওয়ার্ডে ভোটার কমেছে

খুলনা নগর ভবন
ফাইল ছবি

পাঁচ বছরের ব্যবধানে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় সামগ্রিকভাবে ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে। বাড়ার হার প্রায় ৯ শতাংশ। তবে শিল্পাঞ্চলখ্যাত খালিশপুর থানার আওতাধীন দুটি ওয়ার্ডের ভোটার গতবারের তুলনায় কমেছে। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি পাটকল বন্ধ হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকায় দেখা যায়, খুলনা মহানগরের মধ্যে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওয়ার্ডগুলোতে সব মিলিয়ে ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন।

আরও পড়ুন

২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের সময় প্রকাশিত ভোটারসংখ্যার চেয়ে তা ৪২ হাজার ৪৩৬ জন বেশি। ওই সময় ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। নতুন ভোটার তালিকায় পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৮ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৪ জন।

ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচ বছরের ব্যবধানে নগরের ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতে ভোটার বাড়লেও খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ৮ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারের সংখ্যা কমে গেছে। এর মধ্যে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২০১৮ সালে ভোটার ছিল ৭ হাজার ১৯৫ জন। বর্তমানে ভোটার ৬ হাজার ৭২৬ জন। এ ছাড়া ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার ছিল ৯ হাজার ২৫০ জন। এবারের নির্বাচনে ভোটার ৮ হাজার ৬৮৯ জন।

ওই দুই ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালিশপুর এলাকায় গড়ে ওঠা চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ২০২০ সালের জুলাইয়ে বন্ধ করে দেয় সরকার। ওই চারটি পাটকলের শ্রমিকদের বড় অংশ বাস করতেন ওই দুই ওয়ার্ডে। কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর অনেক শ্রমিক পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন। ফলে ভোটার তালিকায় নাম স্থানান্তর করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ডালিম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে নতুন ভোটার বেড়েছে। তবে পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ার পর অনেকে একেবারে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে তাঁরা ভোটার হিসেবে নাম স্থানান্তর করেছেন। এ কারণে নতুন ভোটার বাড়লেও সামগ্রিক ভোটার কমে গেছে। একই কথা জানিয়েছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মুন্সী আবদুল ওয়াদুদও।

ভোটার তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে—৩০ হাজার ২৮৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে—৬ হাজার ৭২৬ জন। থানা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ৯টি করে ওয়ার্ড রয়েছে সদর ও খালিশপুর থানায়। থানা হিসেবে সদর থানায় ভোটার সবচেয়ে বেশি—১ লাখ ৮২ হাজার ৭৪০ জন।
থানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গড়ে সবচেয়ে বেশি ভোটার বেড়েছে সোনাডাঙ্গা থানায়। ওই থানার সাতটি ওয়ার্ডে ভোটার বেড়েছে ১২ হাজার ৫৫২ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার বেড়েছে খালিশপুর থানায়। গতবারের তুলনায় ওই থানার ৯টি ওয়ার্ডে ভোটার বেড়েছে ৮ হাজার ২৯৫ জন।

ভোটার বাড়ার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থা রয়েছে সদর থানা। নয়টি ওয়ার্ডে ভোটার বেড়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ জন। দৌলতপুর থানা রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। ওই থানার ছয়টি ওয়ার্ডে ভোটার বেড়েছে ৭ হাজার ৭০৯ জন।

বেড়েছে ভোটকক্ষ

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য গতবারের মতো এবারও ২৮৯টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গতবারের চেয়ে ভোটকক্ষ বাড়ানো হয়েছে ১৭১টি। এবার ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৭৩২টি। গত নির্বাচনে ভোট কক্ষ ছিল ১ হাজার ৫৬১টি।

জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ব্যালটে সাধারণত একটি কক্ষে ভোটার থাকেন ৪০০-৪৫০ জন। অন্যদিকে ইভিএমে ওই সংখ্যা থাকে প্রায় ৩৫০ জন। এ কারণে ভোটারের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি ভোটকক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।