ভূমিকম্পে নিহত বাবা-ছেলের দাফন সম্পন্ন, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া

নিহত ব্যবসায়ী আবদুর রহিম এবং তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ

ভূমিকম্পে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে নিহত আবদুর রহিম (৪৫) ও তাঁর ছেলে আবদুল আজিজের (১২) লাশ দাফন করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের লাশ দাফন করা হয়।

নিহত ব্যক্তিদের জানাজায় অংশ নিতে ভোর থেকেই আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সাধারণ মানুষ ভিড় করতে থাকেন বশিকপুর আস-সুন্নাহ মাদরাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্সের মাঠে। একপর্যায়ে মাঠে আনা হয় নিহত বাবা-ছেলের লাশ। পাশাপাশি রাখা বাবা-ছেলের কফিন দেখে স্বজনদের পাশাপাশি কান্নায় ভেঙে পড়েন জানাজায় অংশ নিতে আসা কয়েক শ মানুষ। জানাজা শেষে দুজনকে পাশাপাশি কবরে শায়িত করা হয়।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলীতে একটি মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুর রহিম এবং তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ। তখনই ভূমিকম্প; তীব্র ঝাঁকুনিতে ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে। তাতে একসঙ্গে প্রাণ হারান বাবা-ছেলে।

পুরান ঢাকার গার্ডেন সিটিতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন রহিম। সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। ছুটির দিনে ঘরে ভালো খাবারের আয়োজনের করেছিলেন রহিম। সেই কারণে তিনি মাংস কিনতে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়েছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছোট ছেলে আজিজকে।

নিহত রহিমের ভাই ফিরোজ আলম বলেন, ৪ ভাইয়ের মধ্যে আবদুর রহিম ছিলেন পরিবারের ভরসা। ভূমিকম্পে পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে মাথার ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই নিহত হন রহিম। গুরুতর আহত অবস্থায় আজিজকে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রাণ হারায়।

নিহত আবদুর রহিমের আরেক ভাই মো. নাসির কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘এক মিনিটে সব শেষ হয়ে গেল। একই সঙ্গে দুজনকে হারানোর ব্যথা কীভাবে সইব?’ রহিমের প্রতিবেশী ও স্কুলশিক্ষক আমির হোসেন বলেন, ‘আজ বাবা-ছেলেকে একসঙ্গে কবর দিতে হলো—এটা সহ্য করা অসম্ভব। পুরো গ্রামজুড়ে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। একই পরিবারের দুই সদস্যকে হারিয়ে স্বজনেরা অসহায়।’

গতকাল সকালে ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে ওঠে। এ ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত ও ছয় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। সবচেয়ে বেশি—পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে নরসিংদীতে। ঢাকায় চার ও নারায়ণগঞ্জে একজন মারা যান। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন। এ ছাড়া কিছু ভবন হেলে পড়ে ও ফাটল দেখা দেয়। গতকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী।