ভোলায় সাগর মোহনায় ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১৩ জেলে, বন্ধ ফেরি চলাচল

নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার মনপুরা ও চরফ্যাশনে ১০টি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় ভোলার মনপুরা ও চরফ্যাশনে ১০টি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। ট্রলারে থাকা জেলেদের মধ্যে এখনো ১৩ জেলে নিখোঁজ আছেন বলে উদ্ধার হওয়া জেলেরা জানিয়েছেন। এদিকে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে বেলা আড়াইটা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মনপুরা উপজেলার মেঘনা নদীতে (নোয়াখালীর হাতিয়ার উড়িরচরের পূর্ব পাশে সাগর মোহনায় ও সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড-সংলগ্ন) সাগর মোহনায় পাঁচটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলো হলো মনপুরার হাজিরহাট ইউনিয়নের মাছের আড়তদার মাইনুদ্দিনের ট্রলার এফবি মায়ের দোয়া, মনপুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদারের মাছের আড়তের লতিফ মাঝির ট্রলার, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া ঘাটের ইউনুচ বলির ট্রলার, সূর্যমুখী ঘাটের জান্টু মাঝির ট্রলার, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাস্টারহাট খালের জামাল মাঝির ট্রলার।

নিখোঁজ জেলেরা হলেন জামাল মাঝির ট্রলারে থাকা জামাল মাঝি, কবির, সজিব, শাকিল, রফিক, শামীম ও আল-আমিন। অন্যদিকে মনপুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদারের মৎস্য আড়তের লতিফ মাঝির ট্রলারে থাকা লতিফ মাঝিসহ ছয় জেলে নিখোঁজ আছেন। তাঁদের সবার বাড়ি উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন ও মনপুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

উদ্ধার হওয়া জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ সময় সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড–সংলগ্ন সাগর মোহনায় ও হাতিয়ার উড়িরচরের পূর্ব পাশে সাগর মোহনায় জাল ফেলে মাছ শিকার করছিল মনপুরার একাধিক মাছ ধরার ট্রলার। এ সময় প্রবল বাতাস ও ঢেউয়ের তোড়ে ট্রলারের নিচের অংশ ফেটে পাঁচটি ট্রলার ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলারে থাকা জেলেদের অন্যান্য ট্রলার উদ্ধার করলেও ১৩ জেলে এখনো নিখোঁজ। এদিকে সাগর মোহনায় মাছ ধরা মনপুরার অন্যান্য ট্রলার সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে বলে ট্রলারের মালিকেরা জানিয়েছেন।

ভোলা আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলায় এখন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার। নদীবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ৯টা থেকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২১ ঘণ্টায় ভোলায় ১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল বলেন, সাগরে মাছ ধরা অবস্থায় মনপুরার পাঁচটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৩ জেলে নিখোঁজ আছেন। অন্য মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে আছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় কাঁচা ঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

অন্যদিকে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে তাঁর ইউনিয়নের নুর ইসলাম মাঝি, অসীম মাঝি, মনির মাঝি, জালাল শরীফ মাঝি, সোহাগ মাঝির পাঁচটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। জেলেরা পরস্পরের সহযোগিতায় উদ্ধার হতে পারলেও জাল, মাছ ও ট্রলার উদ্ধার করতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, সাগরে জোয়ারের প্রভাবে তাঁর ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে।

মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সাগর মোহনায় মনপুরার পাঁচটি ট্রলার ডুবে গেছে। কয়েকজন জেলে নিখোঁজ আছেন। তাঁদের উদ্ধারে কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

ভোলা দক্ষিণ কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শফিউল কিঞ্জল বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হাতিয়া ও চরমানিকা কোস্টগার্ডের সদস্যরা সাগরে ডুবে যাওয়া ট্রলার ও নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছেন।

ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক পারভেজ খান বলেন, মেঘনা নদী উত্তাল হয়ে পড়ায় বেলা আড়াইটা থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের সব ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ফেরি চলাচল করবে।