এখনো ভোগান্তি পোহাচ্ছেন অনেক ‘নির্দোষ’ গ্রাহক
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় অগ্রণী ব্যাংকের টুনিরহাট শাখায় নথি জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় অনেকের ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছে দালাল চক্র। তবে যাঁদের ঋণ পরিশোধ করা হয়নি, তাঁরা এখনো ভোগান্তিতে রয়েছেন। সেই সময়ের ২৭টি ঋণের বিপরীতে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে।
২০২০ সালের ২১ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘কৃষকের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘ভুয়া’ ঋণ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের টুনিরহাট শাখার মাঠ সহকারী তবিবর রহমানকে ওই বছরের অক্টোবরে ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে ২২ অক্টোবর একই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি মামলা করেন অগ্রণী ব্যাংকের তৎকালীন টুনিরহাট শাখার ব্যবস্থাপক ইব্রাহিম আলী।
ওই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর পাশাপাশি গঠন করা হয়েছিল আরও তিনটি তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা মো. সফিউল্লার ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে অবসর পর্যন্ত একটি বার্ষিক বেতন ইনক্রিমেন্ট এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় উত্থাপিত এসএল আপত্তিকৃত টাকা পূর্ণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবসর ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় শাখায় কর্মরত আছেন। আর পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের সময় টুনিরহাট শাখায় ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা ইব্রাহিম আলী বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুর শাখায় কর্মরত আছেন। ইব্রাহিম আলী ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত টুনিরহাট শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে অগ্রণী ব্যাংকের টুনিরহাট শাখায় অনেক ঋণ পরিশোধ করা হয়। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৮ দিনে ২৪টি ঋণ পরিশোধ করা হয়, যার পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে চলে সমঝোতার চেষ্টা। ভুক্তভোগীদের অনেককে টাকা ফিরিয়ে দিয়ে, আবার অনেককে ঋণ পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করে দালাল চক্রটি। তখন সাময়িক সময়ের জন্য ঋণ বিতরণ বন্ধ রেখেছিল শাখাটি।
বর্তমানে এই শাখার ঋণখেলাপিদের মধ্যে ২৭ জনের নামে সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি মামলাই চাকরিচ্যুত মাঠ সহকারী তবিবর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে। আটটি ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া কিছু ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
লস্করপাড়া এলাকার নির্মাণশ্রমিক আমিনার রহমান বলেন, ‘আমাকে ও আমার চাচাতো ভাই শরিফুলকে ঋণের সাক্ষী করার কথা বলে স্বাক্ষর নিয়েছিলেন চাচা আবদুল হক। তিনি দালালের মাধ্যমে দুটি ঋণ নেন। খবর পত্রিকায় প্রকাশের পর চাচা (আবদুল হক) আমার নামে করা ৬৮ হাজার টাকার ঋণটি শোধ করেছেন। কিন্তু শরিফুলের নামে করা ঋণটি এখনো পরিশোধ করা হয়নি।’
বোয়ালমারী এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ভাই রবিউল ইসলাম আগে সেলুনে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে তাঁর নামে অগ্রণী ব্যাংকে বোরো চাষ বাবদ ৭৩ হাজার টাকা ঋণ হয়। কিন্তু তিনি কিছুই জানতেন না। পত্রিকায় প্রকাশের পর ব্যাংকে খোঁজ নিতে গেলে ব্যাংকের লোকজন আমাদের হাতে একটি টাকা জমার কাগজ ধরিয়ে দেন। আমরা শুনেছি, ভাইয়ের (রবিউলের) নামে ঋণ ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর কারা যেন পরিশোধ করে দিয়েছে।’
অগ্রণী ব্যাংক টুনিরহাট শাখার ব্যবস্থাপক জুয়েলার রহমান বলেন, ঋণ জালিয়াতির সময়কার ঋণ বেশির ভাগই আদায় হয়েছে। সেই সময়ের ২৭টি ঋণের বিপরীতে সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে। সেগুলো আদায় করার চেষ্টা চলছে। ব্যাংকের সব কাজেই স্বচ্ছতা আনা হয়েছে।