ঠাকুরগাঁও সদরে ভোটের হার বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ আ.লীগ নেতার

ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান। আজ দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান ওরফে খোকন। ২১ মে অনুষ্ঠিত ভোটে তিনি চতুর্থ হয়েছেন। ভোটের আগেই তিনি দাবি করেছিলেন, বর্তমান সরকারের আমলে তাঁর নিজ দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে ভোটের হার বাড়িয়ে দেখানো হয়। এ অবস্থার জন্য তিনি নিজেসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দায় দিয়েছিলেন। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ৯ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এই নির্বাচনেও ভোট পড়ার হার বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ করেন।

ভোটের আগে কামরুল হাসান নির্বাচনী সভায় বক্তব্যে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও হামরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। ১৫ বছর যাবৎ হামরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আছি। ভোট আসিলে হামার মতো ধান্দাবাজ লোকলা টাউন থাকে আসে মানুষের কাছে কহছে ভোট দেন, তামাম কাজ করে দিম। এমনভাবে গুছায় কহছে যে মনে হচে, আকাশের চাঁদখান টানে নিচত নামায় দিবে। এলা নতুন সুর তুলিছে, হামাক ভোট না দিলে ভিজিডি কার্ড বাতিল করে দিবে। ভিজিডি কার্ড কি তোমার বাপের?’

আরও পড়ুন
সদর উপজেলা নির্বাচনে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ২১ হাজার ৭৭৯ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়ার শতকরা হার ৪৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টের সামনেই ব্যালট পেপার গণনা করা হয়েছে। ভোট পড়ার হার বাড়িয়ে দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
সোলেমান আলী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আজ সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান বলেন, ‘সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম ছিল। আমি সারা দিনে কেন্দ্রগুলোতে পর্যবেক্ষণ করেছি। এ ছাড়া বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক ভাইয়েরাও ছিলেন, তাতে আমার কাছে কখনো মনে হয়নি ৪৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। আমার কাছে সর্বোচ্চ মনে হয়েছে যে ৩০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এখন বাকি ভোটটা কীভাবে এল, এটা নিয়ে আমার এখনো সংশয়-দ্বিধা রয়েছে। এটা তো আর ভূত এসে করেনি। বাহির থেকে অদৃশ্য, অলৌকিক কোনো শক্তি এসে করেনি। এতে আমাদের দায়িত্বশীল যে সংস্থাগুলো রয়েছে, তাদের কোথাও না কোথাও ব্যত্যয় রয়েছে।’

কামরুল হাসান আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কামরুল হাসান বলেন, ভোটের আগে বিশেষ বিশেষ এলাকায় যেখানে প্রান্তিক মানুষের বসবাস, তাঁদের ওখানে তিন প্রার্থীর পক্ষে টাকাপয়সার লেনদেন হয়েছে। যার কারণে যে ফলাফলের প্রত্যাশা ছিল, সেটার চেয়ে ভিন্ন হয়েছে। এটা হয়েছে একমাত্র অর্থ লেনদেনের কারণেই। প্রধান প্রার্থী দুজন যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছেন, গত সংসদ নির্বাচনেও এত টাকা খরচ হয়নি।

কামরুল হাসান আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনে এক প্রার্থীর অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি ও অশ্লীল-অশালীন বক্তব্য চলেছে। প্রার্থীদের পক্ষে ভোট না দিলে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, টিসিবি কার্ডসহ সামাজিক সুরক্ষাবলয়ের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে, যা গোটা নির্বাচনী এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর প্রবল চাপ, ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির কারণে অনেক ভোটার ভোট প্রদানে বিরত থাকেন। ভোটের দিন ভোটারের উপস্থিতি ছিল প্রত্যাশার চাইতে অনেক কম। সারা দিন কোনো কেন্দ্রেই সারিবদ্ধ ভোটারের দেখা মেলেনি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সোলেমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, সদর উপজেলা নির্বাচনে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ২১ হাজার ৭৭৯ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়ার শতকরা হার ৪৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টের সামনেই ব্যালট পেপার গণনা করা হয়েছে। ভোট পড়ার হার বাড়িয়ে দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

কামরুল হাসান আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত, সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার ও সহসভাপতি রওশনুল হক। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফলে মোটরসাইকেল প্রতীকে মোশারুল ইসলাম ১ লাখ ৬ হাজার ৬৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অরুনাংশু দত্ত পান ৯২ হাজার ৪২৪ ভোট। রওশনুল হক পান ১৪ হাজার ৬৯৯ ভোট। আর কামরুল হাসান পেয়েছেন ২ হাজার ১৬১ ভোট।