দুই বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস সাত্তার। শরীর নিয়ে উঠে বসতে পারেন, তবে একেবারেই চলাচল করতে পারেন না। বাড়িতে আগন্তুক আসার খবরে উঠে বসেন। মুখে মৃদু হাসি নিয়ে বলেন, ‘এক সন্তান, নাতি-নাতনিসহ ভাঙা মাটির ঘরে কোনো রকম দিন কাটাইছি। একটা ঘরের ভেতরেই অসুস্থ শরীর নিয়া পড়ে থাকতাম। তবে এক বছর ধইরা ছাদের নিচে পাকা ঘরে আছি।’
আবদুস সাত্তারের (৭৬) বসবাস গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামে। সেখানে তাঁর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে পাকা বাড়ি। যার কেতাবি নাম ‘বীর নিবাস’। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাপাসিয়া উপজেলার ১১ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অসচ্ছল বিবেচনায় বীর নিবাস তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। কমপক্ষে চার শতক জমি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বীর নিবাসগুলো, যার বাইরের অংশে লাল-সবুজ রঙে রাঙানো হয়েছে।
শেষ জীবনে পাকা বাড়িতে থাকাকে সৌভাগ্য মনে করেন দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা আবদুস সাত্তার। মহান বিজয়ের দিনে গতকাল শনিবার বিকেলে নিজ ঘরের বিছানায় বসে তিনি বলেন, ‘এটা আমার সৌভাগ্য। সন্তানডা কৃষি কাজ কইরা জীবন চালাইতাছে। আমি পাইতাছি সরকারের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা।’ তবে শরীরে রোগ-শোক বাসা বাঁধায় ভালো নেই তিনি। সুচিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি স্যারেগরে একটু কইতেন, আমারে একটু ভালো জায়গায় যদি চিকিৎসা করুন যাইত। আমি আরও ভালো থাকতাম। আপনারা কইলে কাজ হইতে পারে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের নানা উদ্যোগে খুশি আবদুস সাত্তারের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন। তিনিও বলেন, ‘আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সবকিছুই পাইছি। তবে চিকিৎসার ব্যাপারটা একটু দেখলে আরও খুশি হইতাম।’
একই ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামে রয়েছে আরও একটি বীর নিবাস। সেটি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মফিজুল ইসলামের নামে। ৫৫ বছর বয়সে ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে মফিজুল ইসলামের নামে করা বীর নিবাসে এখন থাকছেন তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা। সন্তানদের একজন মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বাবা জীবন বাজি রাইখা মুক্তিযুদ্ধ করছিল। তিনি নাই। তবে সরকার তাঁর ওয়ারিশদের সুবিধা দিছে। মুক্তিযোদ্ধা বাবার কল্যাণে এখন ছাদের নিচে থাকি।’
এই বীর নিবাসে তিনটি থাকার ঘর। পানির জন্য বসানো হয়েছে সাবমারসিবল পাম্প। রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তিনটি থাকার কক্ষের জন্য দুটি আধুনিক শৌচাগার স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি কক্ষের জন্য বৈদ্যুতিক পাখা ও বাতি আছে।
বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে মাসুদুর রহমান বলেন, তাঁরা চার ভাই। আগে একটি মাটির বাড়িতে থাকতেন। তবে তিন মাস আগে সরকারিভাবে বীর নিবাস নির্মাণ করে তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ঘরগুলোয় সব ধরনের আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, অসচ্ছল বিবেচনায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগ পর্যায়ক্রমে আরও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য নিশ্চিত করা হবে।