ছাত্রলীগের লোগো

বগুড়ায় জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিতদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের বগুড়া সদর উপজেলা এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল জয় স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পদবঞ্চিত কয়েকজন নেতার অভিযোগ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের চলমান আন্দোলন ঠেকানোর কৌশল হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত অবৈধ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারও মতামত না নিয়ে সদর উপজেলা এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন।

পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে অংশ নেওয়া জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকবির ইসলাম হত্যাকারীদের প্রশ্রয়দাতা ও ‘খুনির দোসর’। এ কারণে অবৈধ এ কমিটি বিলুপ্তের দাবিতে গত সোমবার শহরের সাতমাথায় বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। চলমান আন্দোলন দমানোর কৌশল হিসেবেই অবৈধ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একক সিদ্ধান্তে সদর উপজেলা এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন।

তবে যৌক্তিক কারণে ওই দুটি কমিটি বিলুপ্ত করার কথা উল্লেখ করে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি সজীব সাহা বলেন, ২০১৬ সালের ১২ মে বগুড়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটি হয়েছিল। এ কমিটির সভাপতি ওবাইদুল্লাহ সরকারসহ অনেকের ছাত্রত্ব নেই এবং বিবাহিত। এ ছাড়া ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই সদস্যের এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফকে গত বছর একটি ঘটনায় বহিষ্কার করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি কে এম মোজাম্মেল হোসেন বিবাহিত এবং তাঁর ছাত্রত্ব নেই। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ‘বিবাহিত’ ও ‘অছাত্র’ কেউ ছাত্রলীগে থাকতে পারবেন না। এ কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ দুটি কমিটি আজ বিলুপ্ত ঘোষণা করে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মে সম্মেলন ছাড়াই সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। এতে বেনজীর আহমেদ সভাপতি ও আসলাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সরকারি আজিজুল হক কলেজের পুরোনো ভবনে রিকশাচালকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে স্থানীয় যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের নেতা ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সবুজ নিহত হন। এর জেরে বেনজীরকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার এবং কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর কলেজ শাখার দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে কে এম মোজাম্মেল হোসেন সভাপতি এবং রাকিব হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে শিবির-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে ওই বছরের ৪ নভেম্বর আবদুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গত বছরের মে মাসে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয় কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফকে। ওই ঘটনায় রউফকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বহিষ্কার করে।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ৭ নভেম্বর বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্মেলন ছাড়াই সাত বছর পর ঘোষিত এ কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের নাম আছে। কমিটি ঘোষণার পরপরই শহরের টেম্পল সড়কে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হন পদবঞ্চিত ও পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীরা। ওই ভবনে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সব সংগঠনের কার্যালয়। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ওই ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত এই অংশের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বগুড়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওবাইদুল্লাহ সরকার। গত শনিবার বগুড়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।এ ছাড়া সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ছাত্রলীগ নেতা তাকবির হত্যাকারীদের ‘দোসর’ দাবি করে সোমবার শহরে মানববন্ধন করে ছাত্রলীগের একাংশ। সেখানেও অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবি জানানো হয়। ওই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওবাইদুল্লাহ সরকার।

ওবাইদুল্লাহ সরকার বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেতে হলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অথচ অনৈতিকভাবে ঘোষিত কমিটিতে অন্য জেলার বাসিন্দারাও পদ পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ব্যক্তিকে জেলা ছাত্রলীগের কোনো মিছিল-মিটিংয়ে কেউ কোনো দিন দেখেননি। কমিটি ঘোষণার আগে জেলা ছাত্রলীগের কোনো কর্মকাণ্ডে, আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো দিনই তাঁকে দেখা যায়নি। বগুড়ার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রও নন তিনি।