নবজাতক কোলে আনোয়ার হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রসবযন্ত্রণায় মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন প্রতিবন্ধী এক নারী (২২)। পরনের কাপড় রক্তে ভিজে গেছে। রাস্তা দিয়ে অনেকে হেঁটে গেলেও কাছে এগিয়ে আসেননি কেউ। তবে কাতরানোর শব্দ বাড়ির ভেতরে পৌঁছানোর পর বসে থাকতে পারেননি গাড়িচালক আনোয়ার হোসেন। ছুটে এসে নারীর এমন অবস্থা দেখে বাড়ি ফিরে নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। সন্তান প্রসবের বিষয়টি স্ত্রী তাঁকে জানালে তিনি ভ্যান ডেকে ওই নারীকে নিয়ে যান স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয় ওই নারীর।

এতেই থামেননি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার গাড়িচালক (অস্থায়ী) আনোয়ার হোসেন। তিন দিন ধরে বিভিন্ন হাসপাতাল আর চিকিৎসকের কাছে ছুটছেন নবজাতককে নিয়ে। সেই মা ও নবজাতক এখন তাঁর হেফাজতে। এই মা ও সন্তানের কী গতি হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আনোয়ার।

আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার বিকেলে কাজ শেষে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়ির বাইরে নারী কণ্ঠের কাতরানোর শব্দ শুনে বেরিয়ে আসেন তিনি। এ সময় ওই প্রতিবন্ধী নারীকে রাস্তার পাশে মাটিতে গড়াগড়ি করতে দেখেন। বিষয়টি তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল দিয়ে জানান। সেখান থেকে তাঁকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে নারীর অবস্থা বেগতিক দেখে স্ত্রীকে ডেকে আনেন তিনি। এরপর নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানেই সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। তিনি বলেন, হাসপাতালে স্থানীয় পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ এসেছিল। তবে পুলিশ খোঁজখবর নিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। কিন্তু এই মা ও নবজাতককে হাসপাতালে ছেড়ে যেতে পারেননি চালক আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ার হোসেন জানান, সন্তান প্রসবের পর কিছু সমস্যা দেখা দিলে ওই নারীকে পাশের পুঠিয়া উপজেলার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। আরও কিছু জটিলতা দেখা দিলে নবজাতককে নিয়ে ছুটে যান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে চিকিৎসা শেষে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তাহেরপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয় নবজাতককে।

তাহেরপুরের ফোরস্টার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক, চিকিৎসক এমদাদুল হক বলেন, প্রতিবন্ধী নারীর ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সব সময় অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। নবজাতককে বুকের দুধও দেননি। সুযোগ পেলেই হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। এই মা ও নবজাতককে দেখাশোনার খরচ বহন করছেন গাড়িচালক আনোয়ার হোসেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী নারী প্রসবযন্ত্রণায় কাতরালেও কেউ এগিয়ে আসেননি। ওই পথ দিয়ে অনেকে গেলেও কেউ উদ্ধার করেননি। গাড়িচালক উদ্ধার করে এখন পর্যন্ত যে সেবা করছেন, তা প্রশংসনীয়। প্রতিবন্ধী নারী কোনো কথা বলছেন না। তাঁকে এর আগে এ এলাকায় দেখা যায়নি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি নবজাতক ও মাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মা অস্বাভাবিক আচরণ করছেন সব সময়। সন্তানের প্রতি কোনো টান নেই। নবজাতককে কার কাছে, কীভাবে দেবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন। প্রশাসনের নজরে আনলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

রাজশাহী সেফ হোমের তত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে নবজাতকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। যদি কেউ নিতে চান, তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রাজশাহী বেবি কেয়ারেও রাখা যাবে।