মুঠোফোন ধরিয়ে দিল ক্লুলেস মামলার খুনিকে

রিকশাচালক আলমগীর ফকির (৬৫) হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার মো. আরিফ (২৮)ছবি সংগৃহীত

এক বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে থাকেন না রিকশাচালক আলমগীর ফকির (৬৫)। দিনের বেলায় গ্যারেজ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালান। আর রাত কাটান গ্যারেজে। গত ৩০ মে বন্দর থানার কাস্টমস ব্রিজের সামনে একটি খালি জায়গা থেকে আলমগীর ফকিরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কানের নিচে দাগ ছাড়া শরীরে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। আঙুলের ছাপ নিয়ে বেওয়ারিশ এই লাশের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। কিন্তু কেন, কী কারণে আলমগীরকে খুন করা হয়েছে, কোনো ক্লু (সূত্র) পাচ্ছিল না পুলিশ।

তবে খুনের পর আলমগীরের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া মুঠোফোনই ধরিয়ে দেয় সূত্রহীন এই মামলার খুনিকে। গতকাল শনিবার রাতে নগরের বন্দর থানার ধুপপুল এলাকা থেকে মো. আরিফ (২৮) নামের ওই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার আরিফও পেশায় রিকশাচালক। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।

যেভাবে ধরা পড়ে আসামি

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর অঞ্চল) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রিকশাচালক আলমগীরের লাশটি উদ্ধারের পর তাঁর কানের নিচে দাগ ছাড়া শরীরে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্তের পর পরিবারের লোকজনও দীর্ঘদিন সম্পর্ক না থাকায় খুনের বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর অঞ্চল) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রিকশাচালক আলমগীরের লাশটি উদ্ধারের পর তাঁর কানের নিচে দাগ ছাড়া শরীরে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্তের পর পরিবারের লোকজনও দীর্ঘদিন সম্পর্ক না থাকায় খুনের বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি।

পরে নিহতের মুঠোফোনের কললিস্ট ধরে এক নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি পুলিশকে জানান, ঘটনার দিন রাতে রিকশাচালকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। ওই সময় সল্টগোলা এলাকায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই নারীকে। ওই নারীর কথার সূত্র ধরে সল্টগোলা এলাকার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা যায়, আলমগীরের রিকশায় করে এক ব্যক্তি (গ্রেপ্তার আরিফ) যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার এক দিন পর আলমগীরের কাছ থেকে যে মুঠোফোনটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি চালু পাওয়া যায়। অন্য সিম নিয়ে সেটি ব্যবহার করছিলেন আসামি আরিফের এক আত্মীয়। পরে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরিফকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

যেভাবে যে কারণে খুন

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর অঞ্চল) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামি আরিফ পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, নিহত রিকশাচালক আলমগীর ও আরিফ একই গ্যারেজ থেকে রিকশা ভাড়ায় নিয়ে চালাতেন। তাঁরা গ্যারেজের ভেতরে অবসর সময়ে মুঠোফোন অ্যাপসের মাধ্যমে লুডু খেলতেন। লুডু খেলা নিয়ে আলমগীরের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁকে চড় মারেন আলমগীর। এ ঘটনার পর প্রতিশোধ নিতে অপেক্ষায় থাকেন আরিফ।

৩০ মে রাত তিনটার দিকে নগরের সল্টগোলা ক্রসিং ফলের দোকানের সামনে থেকে আলমগীরের রিকশায় ওঠেন আরিফ। সঙ্গে রাখেন একটি রেঞ্চ। ইসহাক ডিপোতে যাওয়ার কথা বলে বন্দর থানার কাস্টমস ব্রিজের পাশে খালি জায়গায় দাঁড় করান আলমগীরকে। হঠাৎ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আলমগীরের মাথায় ও বুকে ওই রেঞ্চ দিয়ে আঘাত করেন। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আলমগীরের রিকশা ও মুঠোফোন নিয়ে চলে যান। রিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে ভাঙারির দোকানে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

মামলার বাদী ও নিহতের ছেলে মো. মিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা বাসা থেকে রাগ করে এক বছর আগে বেরিয়ে যান। অনেক চেষ্টা করেও বাসা নিতে পারেননি। এত দিন পর বাবার লাশ পেলেন। তাঁর বাবার খুনে জড়িত ব্যক্তির ফাঁসি চান।