মা-মেয়ের হোটেলের আয়ে চলতে চায় না সাতজনের সংসার

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া বাজারে আয়না বেগমের হোটেল
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া বাজারের বুক চিরে চলে গেছে মনিরামপুর-রূপদিয়া সড়ক। বাজারের প্রায় শেষ প্রান্তে সড়কের পাশে বদ্ধ মুক্তেশ্বরী নদীর কাছে ছোট একটি হোটেল। বাঁশের খুঁটির ওপর চারচালা কাঠের কাঠামো। টিনের ছাউনি। বেড়াও টিনের। তক্তার পাটাতন। হোটেলের মধ্যে ছয়টি টেবিল ও পাঁচটি বেঞ্চ। এর মধ্যে তিনটি টেবিলের সামনে রাখা তিনটি বেঞ্চে বসে ভাত খান লোকজন। হোটেলে ভাতের পাশাপাশি বিক্রি হয় চা ও পান। হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে চান পান এবং পান খান ক্রেতারা। ৩০ বছর ধরে হোটেল চালাচ্ছেন আয়না বেগম (৫৬)।

সম্প্রতি এক দুপুরে কাজের ফাঁকে আয়না বেগম বলেন, তাঁদের বাড়ি মনিরামপুর উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামে। গ্রামে স্বামীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পাঁচ শতাংশ জমির ওপর দুই কক্ষের একটি টিনের ঘর আছে তাঁদের। একসময় স্বামী রফিক গাজী (৬৬) ও তিনি ঢাকুরিয়া বাজারের একটি হোটেলে কাজ করতেন। আট বছর কাজ করার পর বাজারে খাস জায়গায় একটি টিনের চালা তুলে হোটেল শুরু করেন দুজনে। কয়েক বছর পর তাঁর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অস্ত্রোপচারের পর তিনি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। এক বছর ধরে স্বামী শয্যাশায়ী।

আয়না বেগম বলেন, তাঁদের একমাত্র মেয়ে চায়না খাতুনের বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তখন মা-মেয়ে মিলে হোটেল চালিয়ে নিতে থাকেন। আট বছর আগে সরকারি ওই জায়গা থেকে তাঁদের হোটেলটি উচ্ছেদ করা হয়। কয়েক মাস পর ঋণ নিয়ে বাজারের বাইরের দিকে সড়কের পাশে বদ্ধ মুক্তেশ্বরী নদীর কাছে ছোট্ট টিনের চালা তুলে আবার হোটেল শুরু করেন।

১৬ হাত লম্বা আর ১২ হাত চওড়া হোটেলে সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের আয়োজন থাকে। আয়না বেগম বলেন, তিনি ও তাঁর মেয়ে সকাল ছয়টার দিকে হোটেল খোলেন এবং রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে হোটেল বন্ধ করেন। হোটেলের খাবার তিনি রান্না করেন আর মেয়ে চা তৈরি করেন। দুজনে মিলে খাবার ও চা পরিবেশন করেন। সাধারণত সকালে খিচুড়ি আর ডিম এবং দুপুরে ভাত, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল ও সবজি রান্না করা হয়। দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো থাকে। সেখান থেকে প্রতিদিন ২৭০ টাকা ঋণের কিস্তি দিতে হয়। স্বামীর চিকিৎসার খরচ আছে। বাকিটা দিয়ে ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনিসহ সাতজনের সংসার চলতে চায় না।