ফেসবুকে ঢাকা-মাদারীপুরের বাস বর্জনের ডাক অনেক যাত্রীর

মাদারীপুরে বাসভাড়া বাড়ার প্রতিবাদে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজ। প্রতিদিনই সাধারণ যাত্রীরা প্রতিবাদস্বরূপ অন্য জেলার পরিবহনে ঢাকা পৌঁছে বাস ও টিকিটের ছবি পোস্ট দিয়ে পরিবহনগুলোকে বর্জনের ডাক দিচ্ছেন
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভাড়া বাড়ার প্রতিবাদে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলেও সংগঠিত হচ্ছেন প্রতিবাদকারীরা। তাঁরা অন্য জেলার পরিবহনে ঢাকা পৌঁছে বাস ও টিকিটের ছবি পোস্ট দিয়ে মাদারীপুরের পরিবহনগুলোকে বর্জনের ডাক দিচ্ছেন। রুমেল ইমতিয়াজ নামের একজন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘শরীয়তপুর দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি ২৫০ টাকায়। বয়কট মাদারীপুরের সার্বিক, চন্দ্রা, সোনালী। মাদারীপুরের জনগণের আন্দোলনের সাথে আমিও একাত্মতা ঘোষণা করছি।’

লিম্পন খান নামের আরেকজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। সাথে ৫ বছরের মেয়েও আছে। অনেক কষ্ট করে ঢাকা যাচ্ছি, তা–ও মাদারীপুর পরিবহনে যাচ্ছি না। বয়কট মাদারীপুর পরিবহন।’

মাদারীপুর-ঢাকা সড়কপথে বাসভাড়া ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করার প্রতিবাদে এভাবে অনেকেই বর্জন করেছেন এ পথের বাস। তাঁদের একটি বড় অংশ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ও মেসেঞ্জার গ্রুপে এ পথের বাসগুলো বর্জনের ডাক দিচ্ছেন। যাত্রীদের এই প্রতিবাদ চলছে দুই সপ্তাহ ধরে। এসব যাত্রী বিকল্প যানবাহনে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করছেন। অনেকে আবার বরিশাল–ঢাকার পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছেন। এতে যাত্রীসংকটে পড়েছেন মাদারীপুর–ঢাকা পথের বাসগুলো।
মেহেদী হাসান নামের এক যাত্রী পরিবার নিয়ে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বরিশালের একটি বাসে মাদারীপুরের মস্তফাপুর নামেন। এরপর একটি ইজিবাইকে করে মাদারীপুর নতুন বাসস্ট্যান্ডে আসেন। বরিশালের বাসে আসার কারণ জানতে চাইলে প্রথম আলোকে মেহেদী হাসান বলেন, ‘খেয়ালখুশি মতো ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে আমি আমার অবস্থান থেকে মাদারীপুরের পরিবহন বয়কট করেছি। ঢাকা থেকে মাদারীপুর আসতে বরিশালের বাসে জনপ্রতি ৩৫০ টাকা লেগেছে। বরিশালের বাসগুলোর সার্ভিসও মাদারীপুরের বাসের থেকে ভালো।’

এমন অন্তত ২০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মাদারীপুর-ঢাকা সড়কপথে ২৫০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে করা হয় ৩০০ টাকা। পরে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সেই ভাড়া ৩৫০ টাকা করা হয়। আর এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া হয় ৪০০ টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত নন–এসি বাসে ৩৫০ টাকা ভাড়া থাকলেও প্রতিযোগিতা করে অনেক পরিবহন ৩০০ টাকা ভাড়া নিত। একপর্যায়ে জেলার সব কটি ঢাকাগামী পরিবহন যাত্রীপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া নিতে শুরু করে। তবে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির একটি সিন্ডিকেট সভায় এ সড়কপথে বাসের ভাড়া ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কোনো ধরনের নোটিশ বা প্রজ্ঞাপন ছাড়াই যা পরের দিন থেকে কার্যকর হয়।

এ বিষয়ে বিআরটিএ মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নূরুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তারপর বলতে পারব।’

মাদারীপুর-ঢাকা সড়কপথে বাসভাড়া এক শ টাকা বাড়ানোয় যাত্রী সংকটে পড়েছে অনেক পরিবহন। গত রোববার বেলা ১২টায় মাদারীপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মাদারীপুর কার্যালয় সূত্র বলছে, মাদারীপুর থেকে ঢাকা সড়কপথের দূরত্ব ১১১ কিলোমিটার। ৪০ সিটের পরিবহনে প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ২০ পয়সা করে প্রতি সিটের ভাড়া দাঁড়ায় ২৪৪ টাকা ২ পয়সা। পদ্মা সেতুতে টোল বাবদ দিতে হয় ২ হাজার ৪৯৫ টাকা। এর ফলে প্রতিটি সিটের ভাড়ার সঙ্গে যোগ হওয়ার কথা ৬২ টাকা ৩৭ পয়সা।

মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি কার্যকরী সদস্য মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়ায় বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ৪০০ টাকা ভাড়া আগেই নির্ধারণ করা ছিল। জেলার পরিবহন মালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায় ৩০০ টাকা নেওয়া হতো। কয়েক দিন ধরে সব মালিক একযোগে বসে একমত হয়েছেন যে আগের নির্ধারণ করা ভাড়া নেবেন। এ কারণে যাত্রীপ্রতি ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এটি কোনো সিন্ডিকেট নয়।

বিষয়টি নজরে এসেছে জানিয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ অভিযোগ না দিলেও হঠাৎ করে ভাড়া বাড়ানোর কথা নয়। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। প্রয়োজনে মালিক সমিতির সঙ্গে বসে একটি সমাধান করব।’

মাদারীপুর থেকে ঢাকায় সড়কপথে সার্বিক, সোনালী, চন্দ্রা ও মাদারীপুর পরিবহন নামে চারটি কোম্পানির বাস নিয়মিতভাবে চলাচল করে। গত রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাদারীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আধা ঘণ্টা পরপর ঢাকার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় বাসগুলোয় ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। ৪০ আসনবিশিষ্ট প্রতিটি বাস ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।

ভিন্ন চিত্র দেখা গেল মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে মাদারীপুরের বাস বর্জন করে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী বাসগুলোয় যেতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে।
মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে বসে কথা হয় ঢাকাগামী যাত্রী শামীম হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদারীপুরের সব বাস কোনো কারণ ছাড়াই ৩০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা করেছে। পরিবহনমালিকদের সিন্ডিকেট যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলেছে। এর প্রতিবাদে আমরা মাদারীপুরের সব পরিবহন বয়কট করে বরিশালের বাসে ঢাকায় যাচ্ছি। যত দিন পর্যন্ত ভাড়া না কমবে তত দিন পর্যন্ত মাদারীপুরের পরিবহন বয়কট করব—এটিই আমার সিদ্ধান্ত।’