বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে শিশু অপহরণ, মুক্তিপণ না পেয়ে ধর্ষণের পর হত্যা

লাশ
প্রতীকী ছবি

বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে এক শিশুকে (৮) নিজের সাইকেলের পেছনে ওঠান প্রতিবেশী শরিফুল ইসলাম (২৪)। এরপর পুরো বিকেল চলে সাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি। সন্ধ্যার দিকে ওই শিশুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে কৌশলে আটকে রাখেন শরিফুল। রাতে ওই শিশুর বাবাকে কল করে শরিফুল এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই রাতেই শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাস রোধ করে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী অবস্থায় বাড়ির আঙিনায় পুঁতে রাখেন শরিফুল।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে ওই শিশু নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজের পর থেকে শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ করছিল পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। ঘটনার পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শরিফুলকে আটক করে খানসামা থানা-পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গতকাল রোববার রাত নয়টার দিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন শরিফুল। পরে শরিফুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলায় শরিফুলের বাড়ির আঙিনা থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চিত্তরঞ্জন রায় এসব তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। নিহত শিশু স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। আটক শরিফুল একই উপজেলার বাসিন্দা ও খানসামা বিএম কলেজের শিক্ষার্থী।

ওই শিশুর বাবা বলেন, ২ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি রসুনখেতে কাজ করেছেন। কাজ শেষে দুপুরে একসঙ্গে খাবারও খেয়েছেন। প্রতিদিনের মতো বিকেলে তাঁর ছেলে বাইরে খেলতে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পার হয়ে গেলেও ছেলে বাড়ি না ফেরায় তাঁরা আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে মুঠোফোন অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল করে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। মুঠোফোনের ওই প্রান্ত থেকে জানানো হয়, ছেলেকে ফেরত পেতে হলে এক লাখ টাকা নিয়ে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে আসতে।

এরপর ওই শিশুর বাবা ওই মুঠোফোন নম্বরসহ খানসামা থানায় যোগাযোগ করে লিখিত অভিযোগ দেন। রাত নয়টার দিকে ওই নম্বর থেকে আবার কল আসে। তবে কোনো কথা না বলেই অপর প্রান্ত থেকে কলটি কেটে দেওয়া হয়।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বীরগঞ্জ সার্কেল) খোদাদাদ সুমন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক দল অভিযানে নামে। পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে ওই শিশুকে শরিফুলের সাইকেলের পেছনে বসে ঘুরতে দেখা গেছে। পরদিন শরিফুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শরিফুল অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেন। টাকার প্রয়োজন থেকেই শরিফুল এ কাজ করেছেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।