২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি, কাল থেকে তদন্ত শুরু

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পুড়ছে। রোহিঙ্গা বসতিতে ক্ষণে ক্ষণে বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটনায় ধারের কাছে ভিড়তে পারছে না কেউ। আজ রোববার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকে অগ্নিকাণ্ডর ঘটনার রহস্য অনুসন্ধানে মাঠে নামছেন এই কমিটি।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার সন্ধ্যায় এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে গঠিত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন দেবে। এরপর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গঠিত কমিটিতে জেলা পুলিশের একজন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের একজন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একজন, ফায়ার সার্ভিসের একজন, গোয়েন্দার সংস্থার একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

রোববার বিকালে কয়েক ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১১) পৃথক তিনটি ব্লকের দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি (শেল্টার)। এর বাইরে শতাধিক দোকান, ২০টির বেশি বেসরকারি সংস্থার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদানের লার্নিং সেন্টার, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র, ৩৫টি মসজিদ-মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা। ঘটনার পর থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিসসহ কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবী। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও ভেতরে গিয়ে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, তখনো ভেতরে বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটছিল।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কামিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে গেছে। তাতে ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। গৃহহীন অন্যান্য পরিবারেও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রতিবেদন দেওয়ার পর জানা যাবে—রোহিঙ্গা বসতি পোড়ানোর পেছনে নাকশতা ছিল কি না।

তবে কয়েক দিন ধরে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন বসতিতে দিনে কয়েক দফা করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে জানিয়ে আরআরআরসি মিজানুর রহমান বলেন, এটা রহস্যজনক। আজকের (রোববারের) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৪-১৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা কিশোরকে দেশলাইসহ আটক করা হয়েছে। এই রোহিঙ্গা কিশোর ঘরে আগুন দিতে দেখেছেন অনেকে, হাতে নাতে তাকে ধরা হয়েছে। কিশোরকে জিজ্ঞাসাবদ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২২২টি। এর মধ্যে ৯৯টি দুর্ঘটনাজনিত। ৬০টি নাশকতামূলক ও ৬৩টি কারণ জানা যায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আরসাসহ তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং সাতটি ডাকাত দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে। বেশির ভাগ ক্যাম্পের ওপর আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ২০২১ সালে আশ্রয়শিবিরে ২২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে ৩২টি।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, আশ্রয়শিবিরে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালী এলাকার তিনটি (ক্যাম্প-৮, ৯ ও ১১) আশ্রয়শিবিরে। ওই অগ্নিকাণ্ডে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়েছিল। গৃহহীন হয়েছিল ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা গেছেন ৬ শিশুসহ ১৫ জন রোহিঙ্গা।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন ৮ লাখ রোহিঙ্গা।