খেয়া পার হয়ে অনুশীলনে যাওয়া সুমাইয়া এখন বিশ্বকাপ রাঙাচ্ছেন

বাবা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ সুমাইয়া আক্তারের। মেয়ের আগ্রহ দেখে বাবা ময়মনসিংহ শহরে একজন ক্রিকেট কোচের কাছে নিয়ে যান। সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ শহরে যেতে হলে নৌকায় করে ব্রহ্মপুত্র পার হতে হয়। বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সুমাইয়া প্রতিদিন নদী পার হয়ে যেতেন স্কুলে, স্কুল শেষে ছুটে যেতেন ক্রিকেট অনুশীলন মাঠে। স্বপ্নপূরণে কোনো বাধার কাছে হার মানেননি তিনি।

গতকাল শনিবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ টি-২০ বিশ্বকাপ বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য সুমাইয়া। প্রথম খেলায় অস্ট্রেলিয়াকে হারানো ম্যাচে তিনি করেছেন অপরাজিত ৩১ রান।

সুমাইয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

মেয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার পর থেকে বাবা সাইফুল ইসলাম ও মা শাহনাজ পারভীনের আনন্দের সীমা নেই। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে তাঁদের মেয়ে বড় অবদান রাখায় সে আনন্দ যেন বাঁধ ভেঙেছে।

মেয়ের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলার গল্প বলতে গিয়ে চোখে–মুখে আনন্দ ফুটে উঠছিল সাইফুল ইসলামের। সুমাইয়া গত ২৭ ডিসেম্বর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পান জানিয়ে গর্বিত এই বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত বছর বয়স থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভীষণ আগ্রহ আমার মেয়ের। বাড়ির পাশে ছেলেদের ক্রিকেট খেলা দেখত খুব মনোযোগ দিয়ে। কখনো কখনো ছেলেদের খেলার বল কুড়িয়ে দিত। ক্রিকেটের প্রতি ওর এমন অনুরাগ প্রথমে ধরা পড়ে ওর চাচা রাজা মিয়ার চোখে। পরে সে (রাজা মিয়া) বিষয়টা আমাকে জানায়। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলে ওকে ভর্তি করি ময়মনসিংহ নগরের মহিলা সমিতির উদয়ন স্কুলে। বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন নৌকায় করে ব্রহ্মপুত্র পার হতে হয়। একদিন আমি মেয়েকে নিয়ে যাই ময়মনসিংহের একজন ক্রিকেট কোচের কাছে। ওই কোচ সন্ধান দেন মেয়েদের ক্রিকেট কোচিং করানো সুমন্ত দেবের। পরে সুমন্ত দেবের অধীন শুরু হয় ওর ক্রিকেট শিক্ষা।’

আরও পড়ুন

২০১৬ সালে বিকেএসপির একটি দল তৃণমূল পর্যায় থেকে নারী ক্রিকেটার সন্ধানে ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে ক্যাম্প করে। সেখানে নৈপুণ্য দেখিয়ে সুমাইয়া প্রথমে বিকেএসপির তিন মাসের ক্যাম্পে সুযোগ পান। পরে আরও এক মাসের ক্যাম্প। দুটি ক্যাম্পে সফল হওয়ায় তাঁকে ভর্তি নেয় বিকেএসপি। এর পর থেকে শুরু হয় সুমাইয়ার পেশাদার ক্রিকেটের যাত্রা। বয়সভিত্তিক দলে খেলার পাশাপাশি জাতীয় লীগে ময়মনসিংহ বিভাগের নেতৃত্ব দেন তিনি।

এসব গল্প করতে ক্লান্তি নেই সাইফুল ইসলামের। বলেন, ‘খেলাধুলা করতে গিয়ে কখনোই পড়াশোনা ফাঁকি দেয়নি আমার মেয়ে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে শহরে গিয়ে ক্রিকেট অনুশীলন আর পড়াশোনা দুটি কাজই মনোযোগ দিয়ে করেছে।’

সুমাইয়াকে প্রায় পাঁচ বছর ক্রিকেট অনুশীলন করিয়েছেন সুমন্ত দেব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুমাইয়া খুবই মেধাবী ক্রিকেটার। আমাদের আশা, একদিন সে অনেক বড় মাপের খেলোয়াড় হবে।’